চাষাঢ়া থেকে আদমজী অবধি রেলওয়ের জমিতে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা সড়কের নির্মাণ কাজের জন্য পাঠানটুলী এলাকায় অন্তত ত্রিশটি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
৭ জুন বুধবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযানে ঢাকা রেলওয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে স্থানীয় লোকজন এসে বাধা দিলে পুলিশ দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী পুলিশের মারধরের শিকার হয়েছেন।
জানা গেছে, পাঠানটুলী এলাকা দিয়ে ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা সড়কের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১০ ফুট জায়গা। এদিকে রাস্তার দুই দিকেই ছিল সরকারি তথা রেলওয়ের জায়গা। এরমধ্যে রাস্তার পূর্ব দিকে নিট কনসার্ন গ্রুপের দখলে ১০০ ফুটের বেশি এবং পশ্চিম দিকে সাধারণ মানুষের দখলে মাত্র ১০ ফুট জায়গা ছিল। এখন প্রশ্ন হলো রাস্তাটি নির্মাণ করতে হলে কোন দিকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। নিট কনসার্ন গ্রুপের নাকি অসংখ্য সাধারণ মানুষের? এ ক্ষেত্রে সকলেরই মত ছিল যেহেতু নিট কনসার্ন গ্রুপের ভেতরে রেলওয়ের জমি বেশি তাই তাদের স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হোক। তবে নানা জল্পনা কল্পনা শেষে সড়কের পশ্চিম দিকে অবস্থিত ৩০টি অবৈধ স্থাপনা বা সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে সরকারি কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের জমিতে পাকা দালান করায় উচ্ছেদ অভিযানে ভাঙা পড়েছে ডেইজি আক্তারদের বাড়ি। তিনি বলেন, আমার বাবা সারা জীবন সৌদি আরবে থেকে আমাদের জন্য এই বাড়িটি করে দিয়েছিলেন। এই বাড়ি করতে গিয়ে তিনি সৌদিতেই ইন্তেকাল করেছেন। হ্যাঁ আমাদের ভুল হয়েছে যে আমরা সরকারি জমিতে বাড়ি করেছি। কিন্তু আমাদের এখানে মাত্র ৮ ফুট আর রাস্তার অপরদিকে নিট কনসার্ন গ্রুপের শত শত ফুট জায়গা রেলওয়ের। সেটা কেন চোখে পড়লনা। আজকে নিট কনসার্ন গ্রুপের টাকা খেয়ে রেলওয়ে আমাদের বাড়িঘর ভাঙলো। আল্লাহ অবিচারের-বিচার এই জমিতেই করবেন একদিন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, নিট কনসার্ন গ্রুপ প্রতি মাসে রেলওয়েকে খাজনা প্রদান করে এবং এখানে সাড়ে ৩ একর জায়গা ওরা রেলওয়ের কাছ হতে কিনে নিয়েছে। তবে রাস্তার পশ্চিম দিকে আমরা অবৈধ স্থাপনা পেয়েছি তাই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে নাগিনা জোহা সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, আমরা এই সড়কের জন্য রেলওয়েকে যে জমি উদ্ধার করে দিতে বলেছিলাম আজ তারা সেই জমি উদ্ধার করে দিয়েছে। তারা যদি নিট কনসার্নের জমি দিতো তাহলেও আমাদের কোনো সমস্যা ছিলনা। এখন তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি উদ্ধার করে দিয়েছে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা জমি পেয়েছি। এখন ভালো ভাবে কাজ করতে পারবো।
সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সামিউল কাদের খান বলেন, আমরা নাগিনা জোহা সড়কের জন্য ইজারা মূল্যে জমি বরাদ্দ পেয়েছিলাম। ২০১৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। তবে পাঠানটুলী এলাকায় প্রায় ৪০০ মিটার জায়গায় অবৈধ স্থাপনা থাকায় সড়টি সংকুচিত হয়ে যায়। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা এসে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে নিট কনসার্নের পরিচালক জাহাঙ্গীর মোল্লাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, চাষাঢ়া থেকে আদমজী পর্যন্ত প্রায় ৬.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নির্মাণাধীন ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা সড়ক নির্মাণে ব্যায় হচ্ছে ১১৩ কোটি টাকা। সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে রেলওয়ের জমিতে। ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে এই জুন মাসেই ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহা সড়কের নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :