এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরের এক ঘণ্টা লোডশেডিং। নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ এর পরিস্থিতি অনেকটাই এমন। অব্যাহত তাপদাহের মাঝে শুরু হওয়া অসহনীয় লোডশেডিং এ বিপর্যস্ত নারায়ণগঞ্জের মানুষ। গরমের কারণে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা তৈরী হলেও সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। ফলে দিন ও রাতে লোডশেডিং এর যন্ত্রণায় ভুগছেন লাখ লাখ গ্রাহক।
সারাদেশে বিদ্যুৎ চাহিদার চাইতে সরবরাহ কমে যাবার প্রভাব পড়েছে শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জে। শহর এবং শহরতলীতে বেড়েছে লোডশেডিং। দুই একটি এলাকায় তুলনামূলক কম লোডশেডিং হলেও অন্তত দুইবার লোডশেডিং হয়নি এমন এলাকা নেই। আর চব্বিশ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ছয় বার লোডশেডিং হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শহরে প্রতিবার লোডশেডিং একঘন্টা করে স্থায়ী হলেও শহরের বাইরে এর স্থায়ী অন্তত তিন ঘণ্টা পর্যন্ত জানা গেছে। তীব্র তাপদাহের মাঝে লম্বা লোডশেডিং ভোগান্তি বাড়াচ্ছে কয়েকগুন।
অব্যহত লোডশেডিং এর ফলে জনজীবনের পাশাপাশি প্রভাব পড়েছে নারায়ণগঞ্জের শিল্প কারখানায়। বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ‘লোডশেডিং এর কারনে অনেক গার্মেন্ট মালিককে প্রতিদিন ১ লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে অন্তত ১০ ভাগ। শ্রমিকদের বাড়তি কাজ করিয়ে উৎপাদন সচল রাখতে হচ্ছে। একদিকে গ্যাসের সংকট, অন্যদিকে বিদ্যুতের সংকট। বিদ্যুৎ এর সংকটের কারনে যদি ঠিকভাবে অর্ডার সরবরাহ না করা যায় তাহলে ক্রেতারা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন।’
এদিকে ডিপিডিসি ও পল্লী বিদ্যুৎ জানায়, এলাকাভিত্তিক একঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং দিয়ে সমন্বয় করতে হচ্ছে।
কবে নাগাদ এই সমস্যা থেকে উত্তরন হবে তা জানাতে পারেনি কেউ। তবে বাসিন্দারা বলছেন, শহরে এক ঘন্টা করে লোডশেডিং থাকলেও শহরের বাইরে দুই ও তিনঘন্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পানির ট্যাংকি এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, দিন রাত মিলিয়ে অন্তত পাঁচবার লোডশেডিং হয়। সোমবার সকাল ৮টায়, বেলা সাড়ে ১১ টায়, রাত ৮ টায়, রাত সাড়ে ১০ টায় এবং মধ্যরাত ২ টায় লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিবার একঘণ্টা করে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিলো। শহরের বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা প্রীতম বলেন, 'আমাদের এলাকায় লোডশেডিং কম হয়। সকাল ৮টায়, দুপুর আড়াইটায় আর রাত একটার দিকে লোডশেডিং হয়েছিলো। তবে অধিকাংশ দিন দুইবারের বেশী লোডশেডিং হয়না।
সদর উপজেলার ফতুল্লার রামারবাগ এলাকার বাসিন্দা সোহাগ বলেন, দিনে অন্তত পাঁচবার লোডশেডিং হয়েছে। সকাল ৭ টায়, দুপুর সোয়া দুইটায়, রাত ৮ টায়, রাত সাড়ে ১০ টায় এবং ২ টার দিকে লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিবার একঘন্টা অথবা পৌনে এক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না।
নাসিকের অন্তর্গত বন্দরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাহিদা আক্তার বলেন, 'আমাদের প্রতিবার লোডশেডিং এ দুই ঘন্টা বিদ্যুত বন্ধ থাকে। দিনে দুপুর ১ টা থেকে ৩ টা, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯ টা, রাত ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। বন্দর উপজেলার ঘারমোড়া এলাকার বাসিন্দা ইমন বলেন, 'সকাল ১০ টা, দুপুর ১২ টা এবং রাত ১১ টার দিকে লোডশেডিং হয়। আমরা পল্লী বিদ্যুৎ এর আওতাধীন। প্রতিবার এক ঘন্টা করে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখে।
আড়াইহাজার উপজেলা সদরের বাসিন্দা নাহিদ হিমু বলেন, আমাদের একবার কারেন্ট গেলে ৩ ঘন্টার আগে আসে না। সকাল ৭ টা থেকে সাড়ে ১০ টা, দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে সাড়ে ৩ টা, রাত ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে।
অব্যহত লোডশেডিং এর সময়কাল জানতে ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ জোনের প্রধান প্রকৌশলী কামাল হোসেনের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ডিপিডিসি পূর্ব জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা এক ঘন্টা করে লোডশেডিং দিয়ে সরবরাহ সমন্বয় করছি। প্রতিটি স্থানেই এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং রাখা হচ্ছে।’
আপনার মতামত লিখুন :