নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন এবারের কোরবানি ঈদে গরু বিক্রির টাকা তিনি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করবেন। তার সহধর্মিণী মিসেস নাসরিন ওসমানের মালিকানাধীন থ্রি-স্টার ফার্ম হাউজ থেকে এই গরু বিক্রির টাকা মাদ্রাসার উন্নয়নের কাজ করা হবে। আর এই গরু বিক্রির জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
শুক্রবার (২৬ মে) সকাল ৯টা থেকে সেলিম ওসমানের মালিকানাধীন উইজডম এ্যাটায়ার্স লিমিটেডের মেইন গেইটের সামনে লাইভ ওজনে গরু বিক্রি শুরু করা হবে। যত সময় পর্যন্ত গরু থাকবে তত সময় পর্যন্ত বিক্রি চলবে। গরু ডেলিভারী নেওয়ার শেষ সময় ঈদের ৩ দিন আগ পর্যন্ত। গরু বুকিং দিয়ে ৫০% টাকা অগ্রিম দিতে হবে এবং নেওয়ার সময় লাইভ ওজন করে যে দাম আসবে তা পরিশোধ করে নিয়ে যেতে পারবেন।
এ বিষয়ে সেলিম ওসামন বলেন, গরু বিক্রির টাকার মধ্যে থেকে আমরা আড়াইকোটি টাকা মাদ্রাসার উন্নয়ন করার জন্য দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। তাই বলে আমি গরুর দাম বাড়িয়ে দিবো এরকম না। গরুর দাম আমরা একদম কম রাখবো। বাজারে যে গোশতের দাম আছে আমরা তার থেকে বাড়তি করি নাই। বিভিন্ন সাইজে সবাই যেন কোরবানি দিতে পারে সে জন্য আমরা এই পন্থা অবলম্বন করেছি। এই অবলম্বনের প্রেক্ষিতে আমি সবার কাছে সহযোগিতাই চাইবো। আপনারা আমাকে একটু সাহায্য করেন এতিম দুস্থ ছেলেদের শিক্ষার কাজে যেন লাগাতে পারি।
তিনি আরও বলেন, শহরে গরু বিক্রি করতে গিয়ে যে সমস্যা হয়ে থাকে সেটা হলো গরু ক্রয় করে কেউ নিয়ে যায় না। গরুটা ক্রয় করে যদি নিয়ে যেত তাহলে আরও কিছু গরু দাঁড়া করাতে পারতাম। কারণ গরু দাঁড়া করানোর জায়গা আমাদের খুব কম। যদি গরুটা কিনে নিয়ে যান তাহলে সুবিধা হয় যদিও শহরে এটা কঠিন। বর্তমানে খাবারের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে দুধ বিক্রি করে লাভ হয় না। কিন্তু আমরা বাছুরগুলোকে নিয়ে বড় করে ষাড় এবং গাভী বানাতে পারছি এটাতে লাভবান হওয়া যায়।
সেলিম ওসমান বলেন, গরু বড় করা কঠিন কাজ না। দুই চারটা ইনজেকশন দিলেই গরু বড় হয়ে যায়। তবে সেই গরুর গোশত আমাদের জন্য ভালো হবে না। এই ভেজাল দিয়ে যদি কেউ ব্যবসা করে তাহলে মানুষের ক্ষতি করবে। খুলনায় আমাদের প্রায় দেড়শত বিঘা জমি আছে তার মধ্যে প্রায় ১০০ বিঘা জমির মধ্যে ঘাসের চাষ করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দানাদার খাবারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমাদের ঘাসের উপড় নির্ভরতা বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান রাখবো, আপনারা গরু মোটাতাজা করেন কিন্তু কেমিক্যাল ব্যবহার করে না। খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করেন। আপনি পরিশ্রম করে মোটাতাজা করেন।
সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী নাসরিন ওসমান বলেন, আমরা গরু বিক্রির টাকা দিয়ে সামাজিক কাজগুলো করে থাকি। সেলিম ওসমান সাহেব এমপি হওয়ার আগে থেকেই এই কাজগুলো করে আসছেন। স্কুল কলেজ মাদরাসা দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসহ জনহিতকর কাজগুলো করে আসছেন। এই টাকাগুলো আমরা আমাদের পরিবারের জন্য না জনগণের জন্য ব্যয় করে থাকি। আমরা সকলের কাছে দোয়া চাই। যেন এই কাজগুলো করে যেতে পারি।
জানা যায়, আগে আসলে আগে পাবেন নীতিতে ফ্রিজিয়ান ৩০টি, শাহীওয়াল ৯৮টি, দেশী ১৭টি, মহিষ ৫টিসহ মোট ১৫০টি কোরবানির পশু বিক্রি করা হবে। সেই সাথে রয়েছে উন্নত জাতের গারল ৩০টি। গরুগুলি লাইভ ওয়েটে ৩০০-৩৯৯ কেজি পর্যন্ত ৫০০ টাকা, ৪০০-৪৯৯ কেজি পর্যন্ত ৫৫০ টাকা, ৫০০-৯০০ কেজি পর্যন্ত ৬০০ টাকা এবং দেশী ও মহিষ ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমানের মালিকানাধীন থ্রি-স্টার ফার্ম হাউজে কোন প্রকার রাসায়নিক খাদ্য ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব পশুগুলো পালন করা হয়েছে।
এর আগে, গত ৫ মে বন্দরের নবীগঞ্জ ঈদগাহ প্রাঙ্গনে নাসিম ওসমান গোল্ড অ্যাওয়ার্ড ক্বিরআত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেলিম ওসমান বলেছিলেন, আমি ইতোমধ্যে দেড়শত গরু গত দুই বছর ধরে পালন করেছি। আপনাদের দোয়ায় বর্তমান বাজারে ৪ কোটি টাকা গরু বিক্রি করতে পারবো। এই ৪ কোটি টাকার মধ্যে আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ দিবো নবীগঞ্জ মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য।
তিনি আরও বলেন, আড়াই কোটির মধ্যে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে এখানে একটি বিল্ডিং করার জন্য। বাকি এক কোটি টাকা দিয়ে ৪০ জন ছাত্রের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে ৪ বছরের থাকা খাওয়ার ফান্ডিং করা হবে। সেই সাথে বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় কিছু দোকান থাকবে। যার আয় মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য খরচ করা হবে। আমি আমার কাজ করে যাবো। আপনাদের কাজ হবে ছাত্রদের হাফেজ হিসেবে তৈরি করার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা।
আপনার মতামত লিখুন :