বুধবারের সকালটা বেশ অস্বস্তিকর গেছে নারায়ণগঞ্জ নগরবাসীর জন্য। এদিন পুরো শহরের সড়ক ছিল ময়লা আবর্জনা আর কালো পানিতে সয়লাব। কারণ ড্রেনের উঠানো ময়লায় বৃষ্টির পানিতে ভেসে গিয়েছিল পুরো শহর। ফলে দিনভর ছিল এ অস্বস্তি। বিকেল নাগাদও অনেক সড়কের পাশে আবর্জনা সরানো হয়নি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার ১৬ মে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশের ড্রেনের স্ল্যাব উঠিয়ে ড্রেনে থাকা আবর্জনা ও ময়লা তুলে রাস্তার পাশে রাখেন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। ১৭ মে বৃষ্টিতে সে আবর্জনা আবার সড়কে চলে যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি ফসবুক ট্যাটাসে বলেন ‘ময়লা পরিস্কারের এই পদ্ধতি আমার মাথায় ঢোকে না!!! ড্রেন থেকে ময়লা তুলে ৩/৪ দিন এভাবেই ফেলে রাখা হয়।তাও দুপুরে প্রচন্ড ভীড়ের সময়ে কাজটা করা হয়। সেগুলো আমাদের নাক,চোখের ১২ টা বাজিয়ে আস্তে আস্তে শুকায় তারপর ট্রাকে করে তুলে নিয়ে যায়। এর মাঝে যদি বৃষ্টি নামে তাহলে তো পরিস্থিতি এমন হয়। তেলবাহী ট্রাকের মতন ঢাকনাওয়ালা একটা ট্রাকে (কাস্টমাইজ ডিজাইন) করে কি ময়লাগুলো তাৎক্ষনিক নেয়া যায় না? কাজটা কি রাতের বেলা করা যায় না?
এদিকে শহরের অন্যতম ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত জুড়েই হকারদের রাজত্ব। প্রতি রাতেই বেচাকেনা শেষে শহরের যত্রতত্র পলিথিন ফেলে যেতে দেখা যায় হকারদের। প্রতি রাতেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় নিষিদ্ধ পলিথিনের স্তুপ। তবে রাতে ফেলে যাওয়া এসব পলিথিনের কিছুটা পরিস্কার করা হলেও বেশীরভাগ পলিথিনই নিক্ষিপ্ত হচ্ছে পানি নিস্কাশনের ড্রেনে। গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশের ডীপ ড্রেন থেকে ময়লা (বর্জ্য) উত্তোলনের সময়ে এহেন দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা গেছে, শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু রোডসহ বিভিন্ন সড়ক গুলোতে বসা শুধু হকার না পুরো শহরের প্রতিটি দোকানে ও কাঁচা বাজারগুলোতে দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। প্রশাসনের কোন উদ্যোগ না থাকায় বিনা বাধায় চলছে পলিথিনের ব্যবহার। এই পলিথিনকে অবৈধ করা হয়েছে কারণ এই পলিথিন যা মাটিতে গেলে ক্ষয় হয়না বা মাটির সাথে মিশে যায়না। এটি মাটিতে পানি ও প্রাকৃতিক যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে মাটির গুনগত মান হ্রাস পায়। গাছ তার খাবার পায়না। মাটি ও পানিতে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে পড়ে। যা হয়ত পানি থেকে মাছের শরীরে যাচ্ছে। মাটিতে প্লাস্টিকের তৈরি টক্সিক রাসায়নিক পদার্থ গাছে মিশে যাচ্ছে। আর তা পরে শুধু পশু পাখি নয় মানুষের শরীরেও এসে পৌছায়। প্লাস্টিক মানুষের শরীরে আরো অনেক মরণ ব্যাধির পাশাপাশি ক্যান্সারের জন্য দায়ী। আর এই পলিথিনের কারণে আগের মতো কোনো সৌন্দর্য খাল-বিল এখন আর দেখা যায় না। সব খালে রয়েছে পলিথিনের বাহার। নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি কেনো খাল-বিল নদী নালা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু রোডে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা রাস্তা পাশে পড়ে রয়েছে ড্রেনের বর্জ্য ময়লা। এছাড়া শহরের মূল ড্রেনের বিভিন্ন স্থানে স্লাব খুলে ফেলা হয়েছে। উত্তোলনকৃত বর্জ্যের স্তুপের বেশীরভাগই পলিথিন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরোশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ড্রেন পরিষ্কার করার পর বর্জ্য ময়লা রাস্তায় ফেলে রেখে ও মূল ড্রেনের স্লাব খোলা অবস্থায় ফেলে রেখে চেলে গেছে। এ নিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে নগরবাসী। বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে ২নং রেল গেইট এলাকা পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।
শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু রোডসহ বিভিন্ন সড়ক গুলোতে বসা শুধু হকার না পুরো শহরের প্রতিটি দোকানে ও কাঁচা বাজারগুলোতে দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। প্রশাসনের কোন উদ্যোগ না থাকায় বিনা বাধায় চলছে পলিথিনের ব্যবহার। শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু রোডসহ বিভিন্ন সড়ক গুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পলিথিন আবার গিয়ে পড়ছে পানি নিস্কাশনের ড্রেনে। যে কারণে পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন এলাকা।
কাঁচাবাজার, শপিংমল, দোকানদার, চেইনশপসহ বিভিন্নস্থানে এই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই এ পন্য নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও এর উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার একটুকুও কমেনি। নির্ভরযোগ্য বিকল্পের অভাবে বাজার সয়লাব হয়ে আছে এই নিষিদ্ধ পলিথিনে।
বেশ কিছুদিন পূর্বে একটি অনুষ্ঠানে পলিথিনের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু সড়ক আমাদের শহরের একটি মাত্র সড়ক যেখানে হকাররা বসে। রাতের বেলায় তারা যখন চলে যায় তখন রাস্তা প্রচুর পরিমাণ পলিথিন পড়ে থাকে। যদি কখনো সুযোগ হয় রাত ১০টায় শহরে বের হয়ে দেখবেন পলিথিনের শহর, পলিথিনের নগরী।’
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এই অবৈধ পলিথিনের কারণে জলাবদ্ধতা বা পরিবেশের ক্ষতি হোক তা তারা চান না। কিন্তু যদি আমার পলিথিন ব্যবহার না করি তাহলে আমরা আর কি ব্যবহার করতে পারি এমন সহজলভ্য কেনো পণ্য বাজারে নেই। যদি থাকতো তাহলে আমার এই ধরণের অবৈধ জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকতাম।
বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছে ২০০২ সালে। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ব্যর্থতার কারণেই এই পলিথিন থেকে মুক্তি মিলছে না। সরকার বাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তার পুরো বাস্তবায়ন হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :