রাজধানীর নিউমার্কেট ও বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো। বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা হচ্ছে নয়ামাটি। সেখানে প্রায় অর্ধশত বহুতল ভবন রয়েছে। যেগুলোতে প্রায় ২ হাজার ২০০ হোসিয়ারি রয়েছে। একটিতেও অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। মাত্র দুইটি সরু গলি ঘেঁষে গড়ে উঠেছে জমজমাট হোসিয়ারি ও থানকাপড়ের ব্যবসা। যেখানে প্রতিদিন কয়েক’শ কোটি টাকার হোসিয়ারি পণ্যের ক্রয় বিক্রয় হয়। অথচ বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর মধ্যে নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এটি। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ঘিঞ্জি বাণিজ্যিক এলাকাটি নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।
নয়ামাটি এলাকা এতটাই অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ যে ছোট আগুন লাগলেও ঘন্টার পর ঘণ্টা লেগে যায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। এর মূল কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ভবনগুলো। এছাড়া ওই এলাকার গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে রাখা হয় না প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। ফলে যে কোন ছোট খাট অগ্নিকান্ড ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান উক্ত এলাকায় কল-কারখানা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিয়মিত পর্যবেক্ষনের তাগিদ দিয়ে ছিলেন একাধিকবার।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন কর্মকর্তা জানান, নয়ামাটিতে চওড়া রাস্তা নেই, আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নেই। আমাদের গাড়িতে ৩০ মিনিট পানি দেওয়ার মতো পানি থাকে। এরপর বিকল্প খুঁজতে হয়। কিন্তু নয়ামাটির কোনো ভবনেই আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নাই। যেখান থেকে আমরা পানি নিতে পারি। নয়ামাটির ভবনগুলো একটার সাথে আরেকটা লাগানো। যে কারণে আগুন লাগলে ধোয়া বের হতে পারে না। এখানে ভবনগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো। মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা নাই। একটি ভবনেও পানির জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নেই। ২৫ ফুট রাস্তার প্রয়োজন। কিন্তু নয়ামাটিতে রাস্তার ৬ থেকে ৭ ফুট। এছাড়া এক তালা উপরেই ভবনগুলো রাস্তার উপরে নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি যেতে পারে না। বৈদ্যুতিক সংযোগগুলোও এলামেলো। অবৈধ সংযোগ আছে। এসব কারণে নয়ামাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।’
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, নয়মাটি এলাকায় যে ভবনগুলোতে এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেই ভবনগুলোর প্রায় ৯০ ভাগই একটি ভবন ঘেসে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দুইটি ভবনের মাঝে নির্দিষ্ট জায়গা ফাঁকা রাখার নিয়ম থাকলেও সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক দেয়ালেই দুইটি ভবন নির্মাণের নজির এখানে তৈরী হয়েছে।
এছাড়া ভবনগুলোর ভেতরেও পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা নেই। যে কারণে আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। দোকান পাট গুলোতে রাখা হয়না অগ্নি নির্বাপক মেশিন, বালু বা পানির ব্যবস্থা। যাতে করে অগ্নিকান্ড শুরুতেই নিজস্ব স্বক্ষমতায় সেটি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়। প্রতিদিন এই মার্কেটে হাজার হাজার ক্রেতা ও সাধারণ মানুষের যাতায়াত হয়ে থাকে। মানুষের যাতায়াতের সংখ্যার তুলনায় সেখানেও রাস্তা গুলোও অত্যন্ত সংকুচিত। এর মধ্যে রাস্তাগুলোর প্রবেশ পথে অবৈধ দোকানপাট। সংকোচিত রাস্তা এবং প্রবেশ মুখে অবৈধ দোকানপাটের কারনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
আপনার মতামত লিখুন :