News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

টিসিবির পণ্য বাইরে বিক্রি, ২৮ হাজার ডুপ্লেক্স কার্ড চিহ্নিত


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | ইমতিয়াজ আহমেদ : প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩, ১১:১৫ পিএম টিসিবির পণ্য বাইরে বিক্রি, ২৮ হাজার ডুপ্লেক্স কার্ড চিহ্নিত

টিসিবি’র পণ্য অন্যত্র বিক্রির শক্ত অভিযোগ উঠেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: মঞ্জুরুল হাফিজ নিজেই বললেন ২৮ হাজার ডুপ্লেক্স টিসিবি কার্ড চিহ্নিত করার কথা।  জেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। জনগণের হাতে সরকারের পণ্য (টিসিবি) তুলে দিতে বদ্ধ পরিকর জেলা প্রশাসন। এজন্যে ম্যানুয়েল থেকে ডিজিটাল করা হচ্ছে টিসিবি’র কার্ড। ম্যানুয়েল সিস্টেমে এক ব্যক্তি নাম ঠিকানা একটু ঘুরিয়ে দু’টি কার্ড নিত। এমনি করে সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র মাল তুলেই বাইরে বিক্রি করে দিত।

এবার ডিজিটাল কার্ড করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ২৮ হাজার ডুপ্লেক্স কার্ড চিহ্নিত করে বাতিল করেছেন। ফলে এক ব্যক্তি এখন একটি কার্ডের পণ্যই তুলতে পারবে। আর এখন থেকে কার্ড নিয়ে এলেই একজনের মাল আরেকজন তুলতে পারবেনা। ডিজিটাল কার্ড দিয়ে গ্রহীতা কোথায় থেকে কি কি মাল তুলেছেন সব তথ্য ডিসি অফিসে রেকর্ড থাকবে। প্রতারণার সুযোগ থাকছেনা।

টিসিবি কার্ড নিয়ে প্রতারণা এড়াতেই জেলা প্রশাসন ২৮ মার্চ মঙ্গলবার থেকে ডিলারদের ডিও দেয়া বন্ধ রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে ১ লাখ ৫ হাজার বা একটু বেশি হবে টিসিবি কার্ড। ৯০ হাজারের মত কার্ড ডিজিটাল করা হয়ে গেছে। বাকীগুলো দু একদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। নাসিক প্রতিটি ওয়ার্ডে টিসিবি কার্ড শতভাগ ডিজিটাল না হওয়া পর্যন্ত মাল বিতরণ বন্ধ থাকবে।

জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ডিজিটাল কার্ড করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। সরকারের দেয়া পণ্য যাতে সঠিক ব্যক্তিটির হাতেই পৌঁছায় এ জন্য ডিজিটাল কার্ড তৈরী করা হচ্ছে। এমনও হয়েছে যে, একই ব্যক্তি দুই বার নাম ঠিকানা একটু এদিক সেদিক করে টিসিবি কার্ড পেয়েছে দুইটি। এমন ডুপ্লেক্স কার্ড আমরা চিহ্নিত করেছি প্রায় ২৮ হাজারের মত। ম্যানুয়েল কার্ড দিয়ে এই ফাঁকিবাজি ধরা মুশকিল। তাই সরকার ডিজিটাল কার্ড তৈরী করছে। এখন জেলা প্রশাসনের কাছে প্রকৃত তথ্য সরবারহ করতে পারে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। এবার ডিজিটাল কার্ড করতে গিয়ে ২৮ হাজার ডুপ্লেক্স কার্ড আমরা বাতিল করেছি। এমনও পেয়েছি যে, এক ব্যক্তি নাম ঠিকানা ঘুরিয়ে তিনটি কার্ড পেয়েছে। ডিজিটাল কার্ড করতে গিয়ে এই ধোকাবাজি ধরা পড়েছে। এখন এক ব্যক্তি একটি ডিজিটাল কার্ডই পাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, টিসিবি’র মাল বাইরে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। আমি ডিও দেয়া বন্ধ রেখেছি। তাই মাল বিতরণ বন্ধ আছে। যে সকল ডিলার আগে মাল তুলেছে তাদেরও একই নির্দেশ দেয়া আছে। মাল বন্ধ রাখার কারণ ডিজিটাল কার্ড। সকল ওয়ার্ডে শতভাগ ডিজিটাল কার্ড না হলে মাল বিতরণ করা হবেনা। গতকালও ১০ হাজার কার্ড হয়েছে। প্রায় ৯০ হাজারের মত ডিজিটাল কার্ড তৈরী হয়ে গেছে। ১ লাখ ৫ হাজার কার্ড তৈরী হতে আর বাকি নেই। দুই তিন দিন লাগবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা চাই সঠিক লোকটাই সরকারের পণ্য পেয়ে উপকৃত হোক। ডিজিটাল কার্ড হোল্ডারদের মাল দিয়ে বাদবাকি ম্যানুয়েল কার্ডধারীদের মাল ট্রাকেই বিক্রি করে দেয়া হয়। এমন অভিযোগ ভুড়ি ভুড়ি। তাই আমি ডিও দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। প্রয়োজনে দু’তিন সময় বেশি লাগলেও সরকারি মাল প্রকৃত মানুষের হাতে তুলে দিতে চাই। এটা পবিত্র রমজান মাস। মানুষের এই পবিত্র আমানত আমরা অন্যের হাতে চলে যাক তা চাইনা। এ কারণে বলেছি, প্রতিটি ওয়ার্ড শতভাগ ডিজিটাল কার্ড না হওয়া পর্যন্ত টিসিবি পণ্য বিতরণ হবেনা। দু’একদিনের মধ্যেই আমাদের কার্ড তৈরীর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে। তাই মানুষের একটু কষ্ট হবে। তবে দু’একদিন পণ্য বিতরণে দেরি হওয়ার কথা। ডিজিটাল কার্ডেই সবাই টিসিবি পণ্য পাবে। ম্যানুয়েলের দিন শেষ। ডিজিটাল কার্ডে একজন ক্রেতার সব তথ্য থাকে। ম্যানুয়েলে কারচুপি হয়। কারচুপি বন্ধেই একটু সমস্যা হল।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় দেওভোগ পানিরট্যাংকী এলাকায় কথা হয় মামুন, সোহলে ও আম্বিয়া বেগমের সাথে। এরা সবাই টিসিবি কার্ডধারী। মঙ্গলবার দ্বিতীয় ফেজের মাল তোলার কথা। মাল নিয়ে ট্রাক রেডি। কিন্তু টিসিবি বিতরণ করা হয়নি। পাইকপাড়া ঋষিপাড়া এলাকার জমু, মিনারা ও জলিলের মুখে একই কথা ‘সকাল থেইক্কা লাইনে খাড়াইলাম। মাল তুলতে পারলাম না। আমরা গরীব বইল্লা আমাগো সময়ের কি কোন দাম নাই ?

সকালের কর্মব্যস্ততা শুরু হতে না হতে রাস্তার ধারে ফুটপাতে মানুষ লাইন ধরে বসে আছে। নতুন যারা আসছেন, তারাও ধীরে-সুস্থে লাইনের পিছনে গিয়ে বসছেন। জিজ্ঞেস করলে জানান, তারা টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছেন। এভাবে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর ওই স্থানের একটু পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ট্রাক। বিক্রির প্রস্তুতি শুরু করতে না করতেই শুরু হয়ে যায় ভিড়। ট্রাক দেখে আরও অনেকে আসতে শুরু করে। নগরীর পাইকপাড়া ও জিমখানা এলাকায়এ দৃশ্য দেখা গেছে।

নগরীর মাসদাইর এলাকার রমজান, বিথী, জামিল ও মাহাবুব জানায়, দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তারা টিসিবি’র মাল পায়নি। কাউন্সিলরও কোন উত্তর দিতে পারে নাই। খালি কইছে ডিসি অফিসের নির্দেশে মাল বিতরণ বন্ধ। শহরের পাইকপাড়া, তামাকপট্টি, ঋষিপাড়া, ডনচেম্বার ও খানপুর এলাকার বাসিন্দারা দুপুর পর্যন্ত টিসিবি’র পন্যের অপেক্ষা ছিলেন।

নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে টিসিবি পণ্যের জন্য অপেক্ষমান মানুষদের অভিযোগ পেয়ে দু’জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে টিসিবি’র মাল বিতরণ বন্ধ কেনো-একথা জানতে চাইলে তারা সঠিকভাবে কিছুই বলতে পারলেন না। শুধু এটুকু বললেন ডিসি অফিসের নির্দেশে মাল বিতরণ বন্ধ আছে। এ বিষয়ে পরিস্কার কোন তথ্য মিললোনা। দুপুর পৌণে ১টায় এ প্রতিবেদক ডিসি অফিসে গিয়ে এডিসি জেনারেল সাকিব আল রাব্বি’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনো এ ধরনের কোন ঘটনা জানি না। আমি ঘটনা জেনে আপনাকে জানাবো। আপনি নাসিক এর সিইও মহোদয়ের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।

জনগণের হয়রানির বিষয়ে ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু বলেন, সকাল থেকে আমার ওয়ার্ডের দেড় হাজার মানুষ টিসিবি’র মালের জন্য জড়ো হয়েছে। ডিলারও ট্রাকে করে মাল নিয়ে হাজির। প্যাকেট সম্পন্ন। হঠাৎ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্দেশ আসে যেনো মাল বিতরণ করা না হয়। একটা মালও বিতরণ করা হলো না। দেড় হাজার লোক সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে শুনি ডিসি সাহেব ডিও দেয়া বন্ধ রেখেছেন। যদি বন্ধই রাখা হবে তাহলে কেনো মাল দেয়ার রোস্টার করে দেয়া হয়েছিল। জনগণের সময়ের কি কোন মূল্য নেই।

এদিকে, মাসদাইর, দেওভোগ ও পাইকপাড়া এলাকার আওয়ামীলীগ নেতারা বলেন, সরকার মানুষরে কোন দাম দিতে চায় না। নাইলে এমন কাম কেমনে করলো। শয়ে শয়ে লোক লাইনে দাঁড়াইয়া ধোকা খাইলো। তিন/চার ঘন্টা রইদে থাইক্কা অনেক রোজাদার অসুস্থ্য হইয়া গেছিলো। আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে এমন ঘটনার পূণরাবৃত্তি চাই না। জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের ইমেজ কমে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার ১ লাখ ১৫ হাজার জন এ কার্ড পেলেও নারায়ণগঞ্জে অনেক মানুষের বসবাস। এর মধ্যে নিন্মআয়ের মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তবে পরিচিত হওয়ায় কার্ড পাওয়ার অভিযোগ আমরাও শুনি। আসলে নগরবাসীর পরিচিতি হলো এনআইডি কার্ড ও জাতীয়তা সনদে। এগুলোর জন্য আবেদন করতে হয়। যারা করেছেন তারা পেয়েছেন। অনেকে ওই সময় না করে পরে করার কথা ভেবেছিলেন হয়তো। তার এখন কষ্টে পড়েছেন।’

নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘ প্রতিদিন অভাবী মানুষ আমার কাছে আসে। একটা টিসিবি’র কার্ড চায়। আমার খুব কষ্ট হয়। আমি অনেককে বলি দেখছি। আসলে সরকার নতুন করে কার্ড দিলে আমরাও দিতে পারবো। প্রথমে অনেকে কার্ড করেনি। গুরুত্ব দেয়নি। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ায় মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। সবাই কার্ড চায়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে  জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহাকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারাশিদ বিন এনাম বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ১১ হাজার ৪২০ টি কার্ডধারী নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে প্রথম ধাপে চার পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এখন আর কার্ড বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১ লাখ ১৫ হাজার কার্ডধারী টিসিবি’র মাল কিনতে পারছে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় রয়েছেন ১৯ হাজার ৩ জন কার্ডধারী। বন্দর উপজেলায় ১১ হাজার ২৩ জন কার্ডধারী, সোনারগাঁ উপজেলায় ১২ হাজার ৮৭৬ জন কার্ডধারী, রূপগঞ্জ উপজেলায় ২৪ হাজার ৮৯ জন এবং আড়াইহাজার উপজেলায় ২৯ হাজার ৪২৯ জন কার্ডধারী।

Islams Group
Islam's Group