নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। রাজউক কোন দিন একটি ভবনও পরিদর্শন করেনি। রাজউক কর্তাদের আগ্রহ নতুন ভবনের দিকে। ১৮ মার্চ শহরের নিতাইগঞ্জ ডাইলপট্টি এলাকায় একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধ্বসে পড়ে। এ ঘটনার পর থেকে সুধীমহল রাজউক কর্তাদের ধিক্কার দিচ্ছে।
এদিকে সুধীমহলের পাশাপাশি রাজউক এর বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কথা বললেন খোদ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। রাজউক এর বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করলেও এসব বিষয় দেখভাল ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার রাজউক নিয়ে নিয়েছে। তাদেরকে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রদান এবং অবগত করা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ বিভিন্ন সময় নব নির্মিত ভবন নিয়মমাফিক ভাবে গড়ে উঠেনি বলে তারা অভিযান চালিয়ে বর্ধিত অংশ অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে দেয়। রাজউক শুধু ভেঙেই দেয়না, ৫ লাখ ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করে। এমনকি বিভিন্ন বিল্ডিং এর মিটার গুলিও তারা নিয়ে যাচ্ছে এবং সেই মিটারের বিনিময়ে টাকা দাবি করে তারপরে ছাড়ছে। কিন্তু পুরাতন বিল্ডিং এর ব্যাপারে তাদের কোন মাথাব্যথা নাই। দীর্ঘদিন ধরে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও রাজউক অজানা কারনে নীরব রয়েছে।
রাজউক এর হয়রানীর কারণে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে প্রাইভেট সেক্টরে নির্মাণকাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। রাজউক প্রস্তাবিত নতুন ড্যাপ অনুযায়ী গত ৬ মাসে নারায়ণগঞ্জে কোন নতুন ভবন অনুমোদন হয়নি। রাজউক এর হয়রানীতে যখন নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ার যোগার, ঠিক তখুনি মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত যোগ হয়েছে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির খড়গ।
তবে শুধুমাত্র রাজউক এর কারণে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে প্রাইভেট সেক্টরের সব ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতেকরে বেকার হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ এর ৫০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক। দীর্ঘ ৫ মাস ধরে তাদের কোন কাজ নেই। সবাই বেকার। ধারদেনা করে সংসার চলছে কোনমতে। ঘরে তিনবেলা খাবার জুটছেনা। পুরো পরিস্থিতির জন্য রাজউক দ্বারা হয়রানীর শিকার ভুক্তভোগী ভবন মালিক ও বেকার নির্মাণ শ্রমিকরা দায়ী করেছে রাজউক এর নারায়ণগঞ্জ ইনচার্জ ইয়াহিয়াকে।
নির্মাণ শ্রমিক সূত্রে জানাগেছে গত ৬ মাসে রাজউক নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে হয়রানীমূলকভাবে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ২০ টি ভবন ভেঙ্গে দিয়েছে। ভুক্তভোগী ভবন মালিকদের অভিযোগ, রাজউক বিল্ডিং তোলার সময় কিছু বলেনা। বিল্ডিং নির্মাণ কাজ শেষ হলে নানান ভূল ধরে বিল্ডিং ভেঙ্গে দেয়। আসলে ওরা মানুষকে ব্লাকমেল করতে চায়। ভবন মালিক তাদের অনৈতিক দাবি পূরণ করতে রাজি না হলেই বুলডোজার নিয়ে হাজির হয়।
জানাগেছে, নগরীতে সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ন ভবন রয়েছে ৪২ টি। ২০১৮ সালের সার্ভে অনুযায়ী এই ভবনের তালিকা তৈরী করা হয়। যেকোন দুর্যোগ কিংবা স্থাপনা দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারনে ধ্বসে পড়ার ঝুঁকিতে এই ভবনগুলো। এরই মধ্যে একটি ভবন আংশিক ধ্বসে পড়েছে গত শনিবার (১৮ মার্চ) সকালে। ভবনটিতে অগ্নিকান্ড, বিস্ফোরণের ও ধ্বসের কারনে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সকালে শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকার আরকে দাস রোডের ইলিয়াস দেওয়ানের দোতালা ভবনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের জন্য গ্যাস লিকেজকে দায়ী করছেন দমকল কর্মীরা। পাশাপাশি ভবন ধ্বসের পেছনে দুর্বল স্থাপনাকে দায়ী করা হয়। প্রায় চার বছর আগে ভবনটি বসবাসের অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও রাজউক এর উদাসীনতার কারনে ভেতরে চলছিলো একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাজ।
সূত্রমতে, সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ৪২ টি ভবনের মধ্যে ১৫ তম ইলিয়াস দেওয়ানের এই ভবনটি। মালিক ইলিয়াস দেওয়ান নারায়ণগঞ্জ জেলা আটা ময়দা মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি। ভবনটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা অথবা সংস্কার করার জন্য নাসিক এর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার চিঠি প্রদান ও নোটিশ পাঠানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি মালিকপক্ষ। অন্যদিকে এসব ভবনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাজউককে বলা হলেও রাজউক কিছুই করেনি বলে দাবী করেছে নাসিক।
অভিযোগ রয়েছে, 'রাজউকের বেশ কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা নকশা অনুমোদনের নামে ঘুষ নিয়ে থাকেন। সেই টাকা না দিলে অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয় বর্ধিত অংশ। অথচ শহরের মাঝে বিদ্যমান ঝুকিপূর্ন ভবনগুলো নির্বিঘেœ দাঁড়িয়ে আছে। এদের বিরুদ্ধে রাজউকের দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নকশা বর্হিভুত নির্মিত ভবনে অভিযান চালায় রাজউক নারায়ণগঞ্জ। বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হবার পর এদের মালিকরা একত্রিত হয়ে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারী এমপি সেলিম ওসমানের কাছে যান। সেখানে রাজউকের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে নকশা অনুমোদনের নামে মোটা অংকের ঘুষ নেন। এরপর নতুন অফিসার এসে আবারও ঘুষ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে তাদের ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে দেয়া হয়।'ওই অভিযোগের পরে এমপি সেলিম ওসমান রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিয়াকে ফোনকলে বিষয়টি জানান। তাকে নারায়ণগঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি তুলে ধরলে রাজউক চেয়ারম্যান ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ তার দপ্তরে জমা দিতে বলেন।
তবে রাজউকের অথোরাইজড অফিসার শুভঙ্কর সুষ্ময় রায় বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ন ভবন অপসারনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
আপনার মতামত লিখুন :