নারায়ণগঞ্জ এবং নারুতো সিটি অফ জাপান সাথে সিস্টার সিটির চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। ২৮ মার্চ সকালে নারুতো সিটি কর্পোরেশনে মেয়রের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। দুপুরে নারীতো সিটির ইনভারসিটিতে পরিদর্শন করা করেছেন। বিকাল চারটায় চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় নারুতো সিটির মেয়র মিস্টার ইজুমি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সৌজন্যে ডিনার পার্টির আয়োজন করেছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ ও নারুতো মহানগরীর মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দরুণ নারায়ণঞ্জবাসীর সামনে খুলে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। এই চুক্তি স্বাক্ষরের আলোকে উভয় নগরীর মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারণ , শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানবসম্পদ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ বিষয়ে শীঘ্রই রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। এই কাজটি করবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
জাপানের নারুতো নগরীর মেয়র মিচিহিকো ইজুমির আমন্ত্রণে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নারুতো নগরী সফর করছেন। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারুতো নগরের মেয়র মিচিহিকো ইজুমি, টোকিওতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার শেখ ফরিদ, কাইকম গ্রুপের চেয়ারম্যান অঞ্জন দাশ, মারুহিসা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিমিনবু হিরাইশি, নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম প্রমুুখ।
নারায়ণগঞ্জ নগরীর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জাপানিজ ভাষায় অনুদিত বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং নারায়ণগঞ্জ নগরীর ঐতিহ্যের অংশ পাটের তৈরি ব্যাগ উপহার দেন। অন্যদিকে নারুতো নগরের মেয়র জাপানিজ ট্যাপেস্ট্রি উপহার দেন।
বোদ্ধামহলের মতে, রূপরেখা প্রণয়ন হলে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে নারায়ণগঞ্জবাসীর সামনে। অনেক কিছুতেই এগিয়ে যাবে নারায়ণগঞ্জ। উন্নত দেশ জাপানের সাথে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। নারায়ণগঞ্জ ও নারুতো মহানগরীর মধ্যকার শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিক বিষয়গুলো জানা যাবে। জাপানের নারুতো নগরীতে গিয়ে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিতে পারবে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীরা।
নারুতো মহানগরীর ভাল ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি বৃত্তি নিয়েও অনেকে পড়ালেখা করতে পারবে। মোট কথা জাপানের মত একটি উন্নত দেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগে অনেকেই ঢুকতে পারবে। সেখানে ভালমত পড়াশোনা শেষ করতে পারলে ভাল ক্যারিয়ার গড়া মামুলি ব্যাপার। নারুতো মহানগরীর সাথে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষর করে নারায়ণগঞ্জবাসীর কপাল খুলে দিলেন।
নারুতো মহানগরীতে মানবসম্পদ পাঠানো যাবে। সেক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ থেকে দক্ষ জনশক্তি জাপানে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এই সুযোগ পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
নারুতো ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর মধ্যে ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারণ হবে। ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রেও জনবল জাপানে যাওয়ার সুযোগ আসতে পারে। জাপানের ব্যবসায়ীমহল প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে এসে নানা ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন। যেমন বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখিতে জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে জাপানী অটোমোবাইল সেন্টার স্থাপন করা হবে। তেমনিভাবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলাকাতেও জাপানী বিনিয়োগ আসতে পারে।
সাংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দুই মহানগরীর মধ্যে মেলবন্ধন থাকবে। নারুতো মহানগরীর বিভিন্ন সিনেমা, সঙ্গীত, নাটক, লোকনাট্যও নৃত্যকলাসহ চারুকলার বিষয়গুলোর সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীরে পরিচয় ঘটানো হবে। জাপানের নারুতো নগরীর বিভিন্ন সিনেমা ও সাংস্কৃতিক আচার অনুষ্ঠান নারায়ণগঞ্জে পরিবেশন করা হবে। তেমনিভাবে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কৃষ্টি কালচার, লোকনাট্য, সিনেমা, নাটক ও চারুকলার বিষয় নারুতো মহানগরীতে পরিবেশন করা হবে। এভাবে জাপানী শিল্পী কলাকূশলী ও সাংস্কৃতিক কর্মী ও লেখকরা নারায়ণগঞ্জে আসবে। আবার নারায়ণগঞ্জের শিল্পী কলাকূশলীরাও জাপানে যাওয়ার সুযোগ পাবে। বিশাল ব্যাপার।
জাপান এবং জাইকার সহযোগিতা নারায়ণগঞ্জের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইটিও নাওকি বলেছেন, 'দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জাপান সব সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং জনগণের পাশে থাকবে।' ২০২২ সালের ২৩ মার্চ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সফরে গিয়ে নিতাইগঞ্জ এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন নগর ভবনের মেয়র কার্যালয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
ইতো নাওকি বলেন, জাপানের নারুতো সিটির ‘সিস্টার সিটি’ নারায়ণগঞ্জ। সেই অর্থে জাপানের মানুষ বিশেষ করে নারুতো সিটির মানুষের জন্য নারায়ণগঞ্জ শহর বিশেষত্ব রাখে। আমি জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন লেক প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমরা এখানে বেশি অর্থায়ন না করলেও এটি জাপান সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নের একটি প্রতীক হবে এই লেক। নারায়ণগঞ্জ শহরে এসে তিনি আনন্দিত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জন্য নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি রাজধানী ঢাকার লাগোয়া একটি শহর। আমরা নারায়ণগঞ্জ শহরকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতেও নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে পাশে থাকবে জাপান ও জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। এই শহরের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত রয়েছে মনে আমি মনে করি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সাংবাদিকদের জানান, নারায়ণগঞ্জ নগর উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে জাপান সরকারের সহযোগিতায় জাইকা আর্থিক সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের ৮শ’ কোটি টাকা অর্থায়নে উন্নয়ন কাজ চলছে এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, জাপান রাষ্ট্রদূতের সাথে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক। জাপানের একটি সিটির সাথে আমাদের সিটির ‘সিস্টার সিটি’ হিসেবে সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এই সম্পর্ক বজায় রেখে নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নে কাজ করবো। এ সময় মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজটমুক্ত করে বাসযোগ্য একটি শহরে রূপান্তরের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 'রাষ্ট্রদূত আমাদের কাজগুলো দেখতে এসেছেন। এ ছাড়া জাইকার যেসব প্রজেক্ট হচ্ছে, আমরা সেটা ঘুরে দেখিয়েছি। সিদ্ধিরগঞ্জে লেক, শহরের শেখ রাসেল পার্ক, নগর ভবন, চুনকা পাঠাগার ও চারুকলা ইনস্টিটিউট দেখানো হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। এজন্য আমরা উনাকে স্বাগত জানাই।'
আপনার মতামত লিখুন :