আরও দশজন খেটে খাওয়া শ্রমিকের মতো হযরত আলীও গত ১৮ মার্চ সকালে নিতাইগঞ্জের আর.কে.দাশ রোডে গিয়েছিল কাজে। আর সেই কাজে যাওয়াই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো নিরীহ দিনমজুর হযরত আলীর জন্য। কারণ সেদিন সকালে নিতাইগঞ্জে ঘটে যাওয়া ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আলী। তবে বিস্ফোরণের ফলে ভবনের ধ্বংসাবশেষ ছিটকে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা আলীর শরীরের উপরে পড়লে তার হাত, পা, মুখ ও পিঠে গভীর ক্ষত হয়। এরপর থেকে অনেকটা মানবেতর জীবন-যাপন করছে হযরত আলী ও তার পরিবার। অথচ সেই দুর্ঘটনার পর দশদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কেউ তার চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকালে কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত হযরত আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় করুণ দৃশ্য। কাশীপুরের মধ্য-নরসিংপুর এলাকার একটি কাঁচা রাস্তার পাশে অল্প একটু জমির উপর কোনো রকম গড়ে তোলা ছোট্ট দুটি টিনের ঘরে তিন সন্তান, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে বসবাস আলীর।
বাড়িতে ঢুকতেই প্রথম ঘরটিতে দেখা যায় একটি চেয়ারের মধ্যে বসে আছে আলী। মুখের ভেতরে সেলাই থাকায় সে কথা বলতে পারছে না। তবে তার ক্ষত-বিক্ষত চোখ আর মুখ দেখেই বোঝা যায় সেদিনের ঘটনায় কতটুকু আঘাত আর ভয় পেয়েছেন তিনি।
আলীর স্ত্রী শিল্পী বেগম জানান, স্বামীর রোজগারের টাকাতে চলত তাদের ৫ জনের পরিবার। কিন্তু নিতাইগঞ্জের ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় তার স্বামী গুরুতর আহত হলে সংসারের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে স্বামীর চিকিৎসা খরচসহ সংসারের অন্যান্য খরচ জোগাড় করতেই এখন তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে।
শিল্পী বেগম বলেন, এতোগুলা বড় বড় আঘাত পাইল। হাতের হাড্ডি ভাইঙ্গা গেল, মুখে ৪০টা সেলাই দিল। লোকটা অহন বোবা, হাটতে পারে না। বসতে পারে না। কিন্তু কেউ একবার খবর লইল না! এই পর্যন্ত আমি ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো খরচ করছি। গোয়ালে একটা গরু ছিল, গরুটাও বিক্রি কইরা দিছি। এখন তো আর কোনো উপায় দেখতাছি না। ডাক্তার কইসে ডাইন হাতের যেই হাড্ডিটা ভাঙছে, সেটা জোড়া দিতে অপারেশন লাগবে। তার জন্য তিন লাখ টাকা লাগবো। কিন্তু এতো টাকা আমি কই পামু।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিতাইগঞ্জের আর.কে.দাশ রোডের ব্যবসায়ী নেতা ও জেলা তেল, চিনি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সংকর সাহা বলেন, ‘যারা আহত হয়েছে তাঁরা যদি আমাদের কাছে এসে নিজেদের কাগজপত্র জমা না দেয়, তাহলে কিভাবে সাহায্য করবো।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ সকালে নিতাইগঞ্জের ডাইলপট্টি আর.কে.দাশ রোডে আটা ময়দা মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস দেওয়ানের মালিকানাধীন এই দুইতলা ভবনে বিস্ফোরণ হয়। এতে ৯ জন আহত এবং ৩ জন নিহত হয়েছে। তবে এখনো এ ঘটনায় আহত অথবা নিহতদের সরকারের পক্ষ কোনো আর্থিক সাহায্য করা হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :