নারায়ণগঞ্জের বন্দরে হোন্ডাবাহিনীর জমি দখলের চেষ্টাকালে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে আজমেরী ওসমানের সহযোগী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ মঈনুল হক ওরফে পারভেজের ছোট ভাই তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে বন্দর থানায় মামলাটি করেন।
এদিকে পুলিশ এই ঘটনায় এজাহারভুক্ত চার আসামি আজমেরী ওসমানের সহযোগী রায়হানজাদা রবি (৪৫), মামুন (৪৮), মনির হোসেন মনা (৫২) ও কবির হোসেনসহ (৫৫) ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার অপর আসামীরা হলো নূর মোহাম্মদ (৫৫), জাদা রবি (৪৫), মামুন (৪৮), মনির হোসেন মনা (৫২), কবির (৫৫), আমির হোসেন (৩৮), উৎসব (৪০), মুকিত (৪৫), মুহিদ (৪০), পাঠান রনি (৪২)সহ অজ্ঞাত ২৫/৩০ জন।
মামলার বাদী তানভীর আহমেদ বলেন, তাঁদের জমি দখল করতে এসে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ভাইকে মঈনুল হককে গুলি করেছেন আসামি মামুন। তাঁর ভাইয়ের বা পায়ে গুলি লেগেছে। তাঁর ভাইকে বাঁচাতে ভাবি সোমা আক্তার এগিয়ে এলে তাঁরও বা পায়ে গুলি করেন পিজা শামীম। লাঠিসোঁটার আঘাতে পা ভেঙে গেছে। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে দুজনের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাঁরা সেখানে চিকিৎসাধীন। তাঁদের বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর এবং রান্নাঘরে আগুন দেয়া হয়েছে।
মামলার আসামিরা কার লোক জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, জমি দখলের চেষ্টাকালে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার ঘটনায় মঈনুল হকের ছোট ভাই বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
১৬ মার্চ দুপুরে সাড়ে ১২টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান সেতুর পূর্ব পাশে শীতলক্ষ্যার তীরে বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা বাজারের পাশে ওই ঘটনা ঘটে।
আক্রান্ত পরিবার হলো রাইসুল হক। তিনি ২০০২ সালে মারা যান। এর আগে তিনি টানা বেশ কয়েকবার বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি সদর জাতীয় পার্টির সভাপতিও ছিলেন।
জানা গেছে, ফরাজিকান্দা বাজার এলাকাতে রাইসুল হকের মালিাকানাধীন ৬৩ শতাংশ একটি জমি রয়েছে। সম্প্রতি সেখানে ৪৩ শতাংশ জমির একটি সাইনবোর্ড সাটিয়ে দেওয়া হয়। রাইসুল হকের পরিবারের দাবী ওই জমি তাদের নিজেদের।
বেলা সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া থেকে দুটি প্রাইভেটকার ও ২৫ থেকে ৩০টি মটরসাইকেলে করে একদল যুবক মহড়া দিতে দিতে সেতুর দিকে যেতে থাকে। সেতুর পূর্বপ্রান্তে গিয়ে তারা ওই ৪৩ শতাংশ জমির চারদিকে বাঁশের গাথুঁনি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ফরাজিকান্দা মসজিদের পাশে জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত রাইসুল হকের বাড়ির লোকজন জিজ্ঞাসা করতে আসলে তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা ঘটে। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা।
রাইসুল হকের ছেলে মনিরুল হক পারভেজ জানান, আমাদের জমিতে এসে সাইনবোর্ড গেঁথে দিয়ে যায়। কে বা কারা এটা উঠিয়ে দেয়। পরে ১৪ মার্চ এসে আমাদের বাড়িতে ৩০ থেকে ৪০টি মটরসাইকেলে করে লোকজন এসে হুমকি দেয়। পরে বৃহস্পতিবার আমাদের জমি দখল করার জন্য শতাধিক লোকজন এসেছিল। তাদের অনেকেই এসেছিল মটরসাইকেলে করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই ফিল্মী স্টাইলে আমাদের উপর গুলি ছুড়তে থাকে। এতে আমার পায়ে গুলি লাগে। ওই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল পিজা শামীম। মূলত তিনিই এ দখলের চেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছে।
পারভেজ আরো জানান, তাকে বাচাঁতে দৌড়ে আসা পারভেজের স্ত্রী সুমা হককে ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত করে। এ সময় রাইসুল হকের স্ত্রী মাহফুজা হককে মারধর।
এ ঘটনা ঘটিয়ে বের হওয়া সময় এলাকাবাসী ধাওয়ায় পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থল এসে নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে। এলাকাবাসী ধাওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান সেতু অতিক্রম করা সময় রণক্ষেত্র পরিণত হয়। হোন্ডাবাহিনীর চার হোন্ডায় ভাঙচুর চালায় এলাকাবাসী। পরে দুইটি হোন্ডায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
আপনার মতামত লিখুন :