জন্মের পর থেকেই বাচ্চাটির চিকিৎসা করে আসছি। কিন্তু ভালো হচ্ছে না। ডাক্তাররা বলেছেন বাচ্চার হার্টে দুইটি ছিদ্র ধরা পড়েছে। দুইটি অপারেশন করতে হবে। কিন্তু অপারেশন করার মতো কোনো টাকা নেই আমার কাছে। আমার কাছে যে টাকা ছিল সব টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন আর পারছি না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এমন অবস্থায় যদি কেউ এগিয়ে আসতেন তাহলে বাচ্চাটির চিকিৎসা করাতে পারতাম।
ঠিক এভাবেই আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়নের ভূইগড় এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ। দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস ধরেই তার নিজের শিশু বাচ্চার সুস্থতার জন্য চিকিৎসা করিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়নি। এখন টাকার অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা করাতেও পারছেন না।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আটার রুটি বানিয়ে বিক্রি করা আবু সাঈদের পেশা। রুটি বিক্রি করে যা আয় হতো তা দিয়েই স্বামী স্ত্রী দুইজন মিলে তাদের সংসার চলে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে সংসারে নতুন অতিথি আগমনের খবর আসে। আর এই খবর শুনে পরিবারের সকলের মাঝেই আনন্দ বিরাজ করছিল। কারণ তাদের সংসারে নতুন অতিথিই হবে প্রথম সন্তান।
সেই সাথে শিশু জন্মগ্রহণ করেন। নাম রাখেন সিয়াম। সকলের ইচ্ছা তাকে মাদরাসায় পড়িয়ে বড় আলেম বানাবেন। কিন্তু জন্মগ্রহণ করার পর থেকেই তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনা যাচ্ছে না। একের পর এক অসুস্থতা লেগেই রয়েছে। জন্মের পরপরই নিউমোনিয়া হয়। পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় এই ছোট শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে।
এই খবর শুনার সাথে সাথেই পরিবারের সকল সদস্যরা ভেঙ্গে পড়েন। জন্মের পর পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে এখন পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সামধান আর হচ্ছে না। সবশেষ ডাক্তার বলেছেন দুইটি অপারেশন লাগবে। এখন একটি আরেকটি ৫ থেকে ৬ বছর বয়সে লাগবে। সেই অপারেশন করার মতো টাকা আর তাদের নেই। টাকা হলেই শিশুটির অপারেশন হয়ে যায়।
কান্না করতে করতে শিশু সিয়ামের মা স্বপ্না বেগম বলেন, আমার আর কোনো আশা নাই। শুধু আমার ছেলেটি ভালো হয়ে যাক। ছেলেটির কষ্ট দেখলে আর সহ্য হয় না। তার মুখের দিকে তাকালেই কান্না চলে আসে। আমি আমার ছেলেটিকে বাঁচাতে চাই। যদি কেউ আমার এই ছোট শিশুটির চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেন তার কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো। অনেক আদরের সন্তান আমার।
শিশুর বড় চাচা আবুল খায়ের বলেন, আমাদের সংসারে প্রথম সন্তান হচ্ছে এই ছোট শিশু সিয়াম। সকলের নয়নের মনি সে। কিন্তু তার জন্মের পর থেকেই হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছি। কোনো কুল কিনারা পাচ্ছি না। আমাদের যা সঞ্চয় ছিল সবকিছু খরচ হয়ে গেছে এই ছোট শিশুর জন্য। কিন্তু এখন আর পারছি না। আমি আমার এই ছোট ভাতিজাকে বাঁচাতে চাই। তাকে আমি আমার নিজের সন্তানের মতো মনে করি।
শিশুর দাদি জরিনা বেগম বলেন, বাচ্চাটির জন্মের পর নিউমোনিয়া হয়েছিল। পরে ডাক্তারের কাছে নেয়ার পরই হার্টে ছিদ্র ধরা পড়ে। আমি আমার নাতিকে বাঁচাতে চাই। অনেক আদরের নাতি আমার। সারাদিন সে কান্না করে। তার কান্না দেখে আর সহ্য হয় না। যদি কেউ সহযোগিতা করে তাহলে তার জন্য সারাজীবন আল্লাহর কাছে দোয়া করবো। আল্লাহ যদি তাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে আমার নাতিকে আলেম বানাবো।
এ বিষয়ে কুতুবপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য আল মামুন মিন্টু ভূঁইয়া বলেন, সকলের মাঝেই অভাব বিরাজ করছে। কাকে রেখে কাকে সযোগিতা করবো। তারপরেও আমি বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করবো।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, ওয়ার্ড সদস্যের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে আমি বিষয়টি দেখবো। তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়টি বিবেচনা করবো।
আপনার মতামত লিখুন :