নারায়ণগঞ্জে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীর পরিবর্তে অন্য আরেকজনের সাজা ভোগের ঘটনায় প্রক্সিদাতা ও মামলার সাজাপ্রাপ্ত মূল আসামীর বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকেয়া সুলতানা এ ঘটনার জন্য আদালতে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং আদালত তাকে কঠোরভাবে সর্তক করে দিয়ে তার প্রার্থনা মঞ্জুর করে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুর রহমানের আদালত প্রক্সিদাতা ও মূল আসামীর বিরুদ্ধে মামলার আদেশ দেন। সেই সাথে আদালতের নির্দেশে বেঞ্চ সহকারী জহিরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মাদক মামলায় দ-িত প্রকৃত আসামীর নাম জাকির হোসেন সোহেল গাজি। সে বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার মৃত সামাদ মিয়ার ছেলে। আর তার হয়ে প্রক্সি দিয়ে কারাবরণকারী মো. জুয়েল বন্দরের কদম রসুল এলাকার আলাউদ্দিনর ছেলে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী জহিরুল ইসলাম বলেন, আদালত আমাকে বাদী হয়ে আদালতে দন্ডবিধি ২০৫, ৪১৯ ও ১০৯ ধারায় মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়ায় আমি ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।
নারায়ণগঞ্জের কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আদালত মূল আসামীর হয়ে প্রক্সি দিয়ে জেল খাটতে যাওয়া মো. জুয়েলকে মাদক মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আর মূল আসামীকে মাদক মামলায় সাজা ভোগের জন্য কারাগারে পাঠিয়েছেন। তবে এ দুই আসামীর বিরুদ্ধেই আবার মামলা দায়ের করার আদেশ দিয়েছেন। মামলায় তারা দোষী প্রমাণ হলে তাদের সাজা হতে পারে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ২০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া জাকির হোসেন সোহেল গাজির বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১০ আগস্ট তার অনুপস্থিতিতে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১০ দিনের কারাদন্ড প্রদান করেছিলেন আদালত। কিন্তু সোহেল নিজের পরিবর্তে তার পরিচিত মো. জুয়েলকে সোহেল গাজি সাজিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকেয়া সুলতানার মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করান।
পরবর্তীতে আত্মসমর্পণ করায় জুয়লকেই সোহেল হিসেবে সাজা খাটতে কারাগারে পাঠানো হলে বিষয়টি প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষর নজরে আসে। কারণ জুয়েল ইতিপূর্বে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ জুয়লকে চিনে ফেলে এবং তার নাম সোহেল গাজি নয় বলে চ্যালঞ্জ করলে সে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে স্বীকার করে যে তার প্রকৃত নাম মো. জুয়েল। সে মাদক মামলায় দ-িত সোহেল গাজির হয়ে কারাভোগ করতে এসেছে।
বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট আদালতকে জানালে আদালত প্রকৃত আসামী সোহেল গাজিকে গেফতারের জন্য পুনরায় গ্রেফতারী পরায়ানা জারি করেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর বন্দর থানা পুলিশ মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামী সোহেল গাজিকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট শামসুর রহমানের আদালতে সোপর্দ করেন।
সেই ঘটনায় বুধবার সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামী সোহেল গাজি ও তার হয়ে প্রক্সি দিয়ে কারাগারে যাওয়া মো. জুয়েলকে আদালত উপস্থিত রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আসামী সোহেল গাজির আইনজীবী রোকেয়া সুলতানাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ ব্যাপার কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করেছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :