কনজাংটিভাইটিস বা চোখের আবরণ কনজাংটিভার প্রদাহ, যা ‘চোখ উঠা’ নামে পরিচিত। সাধারণত গ্রীষ্মকালে এ রোগের প্রকোপ থাকে। তবে এবার শরৎকালে এ রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে। ছোঁয়াচে হওয়ায় পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ রোগে আক্রান্ত প্রতিদিন অর্ধশত রোগী ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগ কয়েকদিনের মধ্যে সেরে যায়।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে শহরতলিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে চোখ উঠা রোগ। চোখের চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশই চোখ উঠা রোগী। প্রতিদিন ৫০/৬০ জনের অধিক রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন। ছোঁয়াচে হওয়ায় পরিবারের কয়েকজন সদস্য একসাথে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জানা গেছে, চোখ উঠাকে কনজাংটিভাইটিস বা রেড/পিংক আই বলে। অর্থাৎ কনজাংটিভা নামক চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ উঠা রোগ বলা হয়। চোখ উঠার মূল কারণ ভাইরাসজনিত অথবা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ। রোগটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। তবে আক্রান্ত কারও চোখে তাকালেই কারোর চোখ উঠে না। কারও কারও চোখ ওঠা হয়তো তিনদিনে ভালো হয়ে যায়। আবার অনেকের তিন সপ্তাহও লাগতে পারে। সেটা নির্ভর করে কাকে কোন ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত করেছে এবং সেই রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার ওপর।
ঢামেক এর শিক্ষার্থী মনির হোসাইন বলেন, ‘পরীক্ষার হল থেকে বাসায় এসে রাতে ঘুমালাম। সকালে ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে দেখি চোখ খুলতে পারছি না। অথচ রাতে সুস্থ ছিলাম। তবে ড্রপ ও ওষুধ সেবন করে আমি এখন অনেকটা সুস্থ।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারো চোখে তাকালেই চোখ উঠা রোগ হয় না। তবে এ রোগ ছোঁয়াচে, এটির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো কিছু না ছোঁয়া ও তাদের ব্যবহারের জিনিস আলাদা করতে হবে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালোভাবে তৈরি হয়নি, তারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডাঃ আব্দুল হাই টেলিফোনে জানান, চোখ উঠা বা কনজাংটিভাইটিস রোগটি বর্তমানে ভাইরাল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাই এটি এখন সবারই হচ্ছে। ঘরে ঘরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এটি হলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। চোখে পানি দিতে হবে বারবার। ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল খেতে হবে। আর সঙ্গে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। তবে রাস্তাঘাট বা বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে এক্সট্রা ড্রপ কিনে ব্যবহার করা উচিত নয়।
নারায়ণগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের ইনচার্জ গোলাম আজম জানান, হঠাৎ চোখ উঠা বা কনজাংটিভাইটিস অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। রোগীর সংস্পর্শে এলে বা ব্যবহারিত জিনিসপত্র, কাপড়, তোয়ালে, টিস্যু, ইত্যাদি শেয়ার করলে এ রোগ হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা ভাইরাসজনিত রোগ এবং পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। অহেতুক আক্রান্ত চোখ ঘঁষামাজা করবেন না। চোখকে বিশ্রাম দিবেন, চোখের কাজ যেমন পড়ালেখা, টিভি, মোবাইল ব্যবহার সীমিত করবেন। বেশি ব্যথা হলে কুসুম গরম ভাব ব্যবহার করা যেতে পারে, সাথে প্যারাসিটামল বা নাপা জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে এবং চুলকালে আন্টি হিস্টামিন বা এলাট্টল দিন একবারে করে খাওয়া যেতে পারে। বেশি সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :