নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ২নং ওয়ার্ডের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া ক্যানেলপাড়া এলাকায় অবস্থিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এর ফলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা এবং সেবা নিতে আসা রোগীদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। প্রায় ৪৩ বছরের পুরনো এই ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে এমনই বেহাল চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির অধিকাংশ স্থানের পলেস্তরা খসে পড়েছে। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ভবনটির আশেপাশে বিভিন্ন ঝোপঝাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে এ থেকে মশার উপদ্রব বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই ভবনটির ভেতরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তখন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতায়াত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। অর্থাৎ সংস্কারের অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সর্বমোট ৪ জন কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন কেন্দ্র পরিদর্শিকা এবং একজন অফিস সহকারী রয়েছেন। প্রতিদিন এখানে আশেপাশের এলাকার অর্ধশতাধিক মানুষ সেবা নিতে আসেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে মাসে পাঁচ শতাধিক ডেলিভারি করা হয়। তাই ওই এলাকার নারীদের জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অতি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। অতি দ্রুত ভবনটি সংস্কার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি স্থাপন করার দাবি রোগী ও চিকিৎসকদের।
পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা রুমি আক্তার নামে এক রোগী জানান, এই এলাকায় এটিই একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যেখানে শুধুমাত্র নারীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আশেপাশে এমন আর কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। কিন্তু সংস্কারের অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
সেবা নিতে আসা আমরিন জামান নামের আরেক রোগী জানান, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ এতোই নাজুক যে এখানে চিকিৎসা নেওয়া এখন আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবসময় চিন্তাই থাকি কখন যেনো এটি ভেঙ্গে পড়ে। আর বৃষ্টি হলে আমাদের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। তখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার কথা চিন্তাও করা যায় না।
আবুল হোসেন নামের ওই এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আশেপাশের এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিষ্টা করা হয়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট এলাকাবাসীর আকুল আবেদন থাকবে তারা যেনো সরেজমিনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার আম্বিয়া আক্তার জানান, এখানে গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ, পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা, ডেলিভারি, প্রসবসেবা ও মা ও শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে সব রোগীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করি। তবে হাসপাতালটি সংস্কার করা হলে আমরা রোগীদের আরও ভালো সেবা প্রদান করতে পারবো।
সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা কাজী মাহবুবা আমিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। চেষ্টা করেও আমরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ ঠিক রাখতে পারছি না। এমন পরিবেশে চিকিৎসা প্রদান করতে গিয়ে আমরাও অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় থাকি।
এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনার নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার শর্মা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি খুব শিগগিরই সংস্কার করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :