নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের টিকা। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে দুই ধাপে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের এই টিকা প্রদান করা হবে। উক্ত ক্যাম্পেইনে জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের এবং ১০ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কিশোরীদের কমিউনিটিতে এই টিকা প্রদান করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সকালে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহম্মদ মুশিউর রহমানের সভাপতিত্বে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনীক বিশ্বাস ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. আফরোজা আক্তার পলি। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইম্যুনাইজেশন মেডিকেল অফিসার মোর্শেদুল ইসলাম খান। জেলা ইপিআই সুপারিন্টেন্ডেন্ট লুৎফর রহমানের তত্ত্বাবধানে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জুনিয়র স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাকির হোসেন, সিসিটি মো. আনোয়ার হোসেন ও সহকারী স্টোর কিপার শওকত জামান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে এইচপিডি টিকা সংযোজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ১ম ধাপে ঢাকা বিভাগের সকল জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভায় এই ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত ক্যাম্পেইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের এবং ১০ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কিশোরীদের কমিউনিটিতে এই টিকা প্রদান করা হবে। এই কার্যক্রম আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে একযোগে শুরু হবে। জেলার লক্ষ্যমাত্রা বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রী ১,২৩,৭১৮ জন এবং কমিউনিটিতে কিশোরীর সংখ্যা ৯,৭৭৩ জন।
জেলা সিভিল সার্জন এর সভাপতিত্বে বিগত ২১ মার্চ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এইচপিভি ক্যাম্পেইন এর জেলা এ্যাডভোকেসি ও প্ল্যানিং সভা সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে গত ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সমন্বয় সভা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সকল বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সমন্বয় সভা, এডভোকেসী সভা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগীয় কর্মীদের সমন্বয়ে ওরিয়েন্টশন এবং প্লানিং সভা সম্পন্ন করা হয়েছে। দিবসটি পালনের জন্য সর্বস্তরের জনগোষ্ঠিকে অবহিত করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে সর্বত্র মাইকে প্রচারনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণকে অবহিত করছেন। জেলা তথ্য বিভাগ নারায়ণগঞ্জ এর মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য ও মাইকিং এর মাধ্যমে জনগণের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত আছে। এছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে টেলিভিশন, পত্রিকা ও মোবাইলের মাধ্যমে উক্ত দিবসের প্রচারণা অব্যাহত আছে।
জেলার সকল মসজিদের ইমামদের জুমার নামাজের খুতবা পাঠের আগে ও অন্যান্য সময়ে আগত মুসল্লিদের এইচপিডি ক্যাম্পেইন এর বিষয়ে অবহিত করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মহোদয় ইতোমধ্যেই পত্র দ্বারা অবহিত করেছেন। এ ছাড়া জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সারাদেশের ৩০০ হাসপাতাল, জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল এবং প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিডি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর। এতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার তেমন কোন ঝুঁকি নেই। তাই এই কার্যক্রমে সফল বাস্তবায়নের জন্য সম্মানিত সাংবাদিক বৃদ্ধের সহযোগিতা কামনা করি এবং অতীতের মত এবারও সকলের সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে অত্র জেলায় এইচপিভি ক্যাম্পেইন এর সুুষ্ঠু ও সফল বাস্তবায়ন সম্ভব।
সভায় আরও জানানো হয়, বিশে^র ১৬৫টি দেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিডি টিকা দেয়া হচ্ছে। ২০১৪-১৫ সালে দেশের গাজীপুর সিটি করপোরেশনে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই টিকার কার্যক্রম চালু হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :