৮০ বছর বয়সি মরজিনা বেগম অসুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকালে ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন। আসার সাথে সাথেই ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন। তাই সকাল সাড়ে ১১টায় মরজিনা বেগমকে তৃতীয় তলায় মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানে গেলে নার্সরা তাকে শয্যা সংকট বা বেড খালি না থাকার কারণ দেখিয়ে মেঝেতে শুইয়ে দেন। তবে তখনও সেই ওয়ার্ডে দুটি বেড খালি ছিল।
মরজিনা বেগমের মেয়ে সুমি আক্তার বলেন, ‘এখানে বেড খালি আছে। তারপরও আমার মাকে নার্সরা মাটিতে শুতে দিল। তারা বলে এগুলো শিশুদের বেড তাই কাউকে দেওয়া যাবে না। আর আসার পর থেকেই দুর্গন্ধ। পাখার বাতাস তো নিচে লাগেই না। তাই বাসা থেকে ফ্যানও নিয়ে আসছি। এখন দুপুর হয়ে গেল তবুও তারা আমাদের একটি বেডের ব্যবস্থা করে দিল না। এই হচ্ছে অবস্থা।’
এদিকে মরজিনা বেগমের মেয়ের কথা শেষ না হতেই পাশের একটি বেড থেকে ডাক আসল। যিনি ডেকেছেন তার নাম রাজরানী বেগম। রাজরানী বেগম বেশ কয়েকদিন ধরেই এখানে ভর্তি। তবে তার দাবি এটা সরকারি হাসপাতাল হলেও ভর্তির পর থেকে তিনি কোনো সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারেনি।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমার গলায় সমস্যা আছে। সাথে আরো একটা অসুখ হইসে। যতোবার গাইনি বিভাগের ডাক্তার আপার কাছে গেছি, সে খালি আমারে বলে মর্ডানে যান। মর্ডানে যান। আমার স্বামী নাই, একটা বড় ছেলে নাই, খুব কষ্টে আছি। আমার অতো ব্যবস্থা থাকলে কি আর এই হাসপাতালে আইসা পইরা আছি বলেন? কিচ্ছু নাই এখানে। আমার কাছে টাকা থাকলে একটু উন্নত জায়গায় চইলা যাইতাম। এখানে থাকতাম না ভাই।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলার মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের এক রোগী ও আরেক রোগী স্বজন এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে তখন সেখানে কর্তব্যরত নার্সরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তারা বলেছেন ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে। তবে তৃতীয় তলায় ঘুরে একজন ডাক্তারও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, তৃতীয় তলা থেকে নেমে ১০০ শয্যা হাসপাতালের নিচ তলার জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায় ভিড়। তাই একটু কাছে যেতেই চোখে পড়ল মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলকে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাই তার বক্তব্য শেষে জানতে চাওয়া হয় কি বিষয়ে কথা হচ্ছিল? তখন আমিন মিয়া নামের সেই ব্যক্তি বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গরু আসলেও বিরক্ত হইব। কারণ এখানে রোগীর চেয়ে দালালের সংখ্যা বেশি। আমি ডাক্তারের রুমের ভেতর থেকে বের হতেই ৫ জন দালাল আমার উপর লাফাইয়া পরছে! আর জিজ্ঞেস করা শুরু করছে ডাক্তার আমাকে কি পরীক্ষা দিছে এবং কি ওষুধ দিছে। আপনারাই বলেন ডাক্তার আমাকে কি বলছে সেটা আমি দালালরে কেন বলমু?’
এ বিষয়ে কথা বলতে ১০০ শয্যা জেনালের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার শেখ ফরহাদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
আপনার মতামত লিখুন :