এবার নগরবাসী পাচ্ছে ‘মডার্ণ টয়লেট’। শহরের দ্বিগুবাবুরবাজার ও নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় ২টি মডার্ণ টয়লেট নির্মিত হয়েছে। টয়লেট দু’টি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একেকটি টয়লেট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০ লাখ টাকা। মডার্ণ টয়লেট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা ‘ভূমিজ’ এর সহযোগীতায়। দ্বিগুবাবুর বাজারের ভেতরে লেবুপট্টি সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত এই মডার্ণ টয়লেট তৈরী হয়েছে মূলত: নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জের কোথাও প্রতিবন্ধীদের জন্য টয়লেট ব্যবস্থা নেই। নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সমাজের সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধীদের জন্য মডার্ণ টয়লেট নির্মাণ করে দিয়েছেন। মেয়রের পরিবেশ ও জনবান্ধব এই উদ্যোগ সুধীমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
নগরবাসীকে আধুনিক ও মানসম্মত টয়লেট উপহার দিতেই সিটি কর্পোরেশন এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নাসিক সূত্রমতে, এই মডার্ণ টয়লেটে শাওয়ারে গোসলের ব্যবস্থা থাকছে। টয়লেট এর জন্য ৫টাকা ও গোসলের জন্য ১০ টাকা করে নেয়া হবে। টয়লেটে বেসিন থাকবে। সাথে টিস্যুও। যে এলাকায় এই টয়লেট সে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের (দোকানদার ও ব্যবসায়ী) জন্য মাসিক কার্ড সিস্টেম করা হয়েছে। ৩০০ টাকায় এক মাসের জন্য একটি কার্ড কেনা যাবে। কারণ দ্বিগুবাবুর বাজারের দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা একটি দোকানে কয়েকজন লোক থাকে। তারা দিনে বেশ কয়েকবার টয়লেট ব্যবহার করেন। তাদের জন্য এই কার্ড সিস্টেম। একজন দোকানদার মাসে একটি কার্ড কিনবে ৩০০ টাকা দিয়ে। সেই কার্ড দিয়ে দোকানের সকলেই টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
দ্বিগুবাবুর বাজারে মডার্ন টয়লেট (গণশৌচাগারে) পুরুষ ব্যবহারকারীদের জন্য একটি কমোড ও দুটি প্যান টয়লেট চেম্বার, একটি ইউরিনাল এবং দুটি বেসিন রয়েছে। নারী ও শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে একটি আলাদা কমোড ও বেসিন। এখানে শিশুদের ডায়াপার বদলের সুব্যবস্থাও রয়েছে। আধুনিক এই টয়লেটে অটোমেটিক এন্ট্রি গেট সংযুক্ত করার কথা রয়েছে (কারিগরী সাপোর্ট সাপেক্ষে)। ব্যবহারকারীরা ভূমিজ স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে টয়লেটের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। টয়লেট পরিচারকের কাছ থেকে এ স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করা যাবে।
প্রতিবার ব্যবহার ফি ৫ টাকা। শিশুরা ব্যবহার করতে পারবে বিনামূল্যে। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টয়লেটটি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। দ্বিগুবাবুর বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে এ রকম নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত গণশৌচাগার নির্মাণ ও পরিচালনা খুবই চমৎকার একটি উদ্যোগ। এ রকম শৌচাগার নগরীর অন্যান্য স্থানেও প্রয়োজন রয়েছে। নতুন এ উদ্যোগের ফলে রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীরা, বিশেষ করে নারীরা স্বস্তি পাবেন বলে মনে করেন তারা।
গণশৌচাগার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ভূমিজের প্রতিষ্ঠাতা ফারহানা রশীদ এর মতে, সব জনবহুল জায়গায় নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটসেবা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। সবার সহযোগিতা পেলে এই সেবা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একজন ব্যাংকার বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসীর স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এই টয়লেট টেকসই বিজনেস মডেলের দারুণ এক দৃষ্টান্ত। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ধরনের বিজনেস মডেলে আরো বিনিয়োগ আশা করছি।
বিবিএসের জরিপে দেখা যায়, নগরাঞ্চলের প্রায় ৬১ শতাংশ পরিবার অন্য পরিবারের সঙ্গে তাদের ল্যাট্রিন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। নগরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে মাত্র ৪৬ শতাংশ পরিবার। বাকি ২৪ শতাংশ পরিবার পানি নিরোধক এবং ২৯ শতাংশ পানি নিরোধক নয় এমন পাকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। পানি নিরোধক নয় এমন ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী পরিবারে পোকামাকড় বা অন্য বাহকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে। নগরাঞ্চলে বসবাসরত পরিবারগুলোর মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে পায়খানা করার কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
নগরাঞ্চলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও পানির উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি লক্ষ্য করা যায়। নগরাঞ্চলের ৮৬ শতাংশ পরিবার টয়লেটের পাশে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখে এবং ৯০ শতাংশ পরিবার হাত ধোয়ার স্থানে পানির ব্যবস্থা রাখে। তবে পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধার বিচারে শহরের দরিদ্র পরিবারগুলোতে হাত ধোয়ার উপকরণের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এর হার ৬৪ শতাংশ এবং অন্য নগর এলাকায় ৭৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর এক সমীক্ষায় দেকাগেছে, বাংলাদেশের নগর এলাকার জনগণ পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, যা খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। নিরাপদ পয়ঃব্যবস্থাপনার অভাবে ডায়রিয়া, কৃমি সংক্রমণ ও উদরাময় রোগ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। নিম্নমানের পয়ঃব্যবস্থাপনা যেমন- পানি নিরোধক নয় এমন ল্যাট্রিন ও হাত না ধোয়ার কারণে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ফলে শহর এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ অবস্থায় নগরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের জনগণের পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে ধারণা পাওয়া সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন :