এক সময়ের প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ আমাদের প্রাণের শহর। আর নারায়ণগঞ্জের প্রাণ হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী। নারায়ণগঞ্জের মধ্য দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী প্রবাহিত। তাই শীতলক্ষ্যা নদীকে এই শহরের হৃদস্পন্দন বললেও ভুল হবে না। কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদী মানুষ সৃষ্ট বর্জ্যরে কারণে আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে।
বিকেলে শহরের সেন্ট্রল খেয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায় বহু মানুষের ভীড়। শহর বন্দরের বহু মানুষ এই ঘাট দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়। মানুষের পারাপার চলতে থাকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। নদী পরাপারের জন্য রয়েছে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার আর নৌকা।
সেন্ট্রাল খেয়া ঘাট দিয়ে শীতলক্ষ্যার দুই পাড়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত হয়। এখানে বেশির ভাগ মানুষ শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে তাদের নিজ নিজ কর্ম ক্ষেত্রে যোগ দেন। সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটের পাশেই রয়েছে লঞ্চ ঘাট। যেখান থেকে দূর পাল্লার লঞ্চগুলো চলাচল করে। এ লঞ্চ ঘাট থেকে মূলত মুন্সীগঞ্জ আর চাঁদপুরগামী যাত্রীদের যাতায়াত বেশি।
শহরের ব্যস্ততম সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটকে কেন্দ্র করে শত শত দোকাট পাট আর ব্যবসা গড়ে উঠেছে। একদিকে সেন্ট্রাল খেয়াঘাট দিয়ে নদী পারাপার হয়ে হাজার হাজার মানুষ যে যার মতো কর্মক্ষেত্রে দিকবেদিক ছুটছে। আর অন্যদিকে ব্যস্ত এ ছোটাছুটির মাঝে অনেকে এসেছেন শীতলক্ষ্যার দৃশ্য উপভোগ করতে।
সেন্ট্রাল ঘাটে নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে ওয়াক ওয়ে। এদিকে রবিবার রাত থেকে শহরে ঝিরঝির বৃষ্টি যা সোমবার সকাল থেকেও হয়। বৃষ্টি¯œাত দিনে নদীর দৃশ্য উপভোগ করার মজাই আলাদা। এদিকে নদীর পাড়ে দেখা যায় অনেকে মনের আনন্দে আড্ডা দিচ্ছেন। চা আর বাদামে নদীর পাড়ে আড্ডা ভালই জমেছে।
অন্যদিকে দেখা যায় বয়সে তরুণ কিছু ছেলে মেয়েরা লঞ্চ ঘাটে থামানো লঞ্চের ছাদে বসে গিটার বাজিয়ে গানের সুর তুলেছে। ঝিরঝির আর থেমে থেমে বৃষ্টি সেই সাথে দমকা হাওয়া পরিবেশটা উপভোগ করার মতোই। দেখা যাচ্ছে বিভিন্নভাবে এই মৃত প্রায় শীতলক্ষ্যা নদী এখনো শহরের মানুষের মাঝে প্রাণসঞ্চার করে চলেছে। আর এই নদী যদি এখনও পূর্বের মতো দূষন মুক্ত থাকতো তাহলে বলুন তো কেমন হতো?
লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বাইরে এসে ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম খেয়া ঘাটের দিকে। ওয়াক ওয়ে দিয়ে দুর্গন্ধে হাটা যাচ্ছে না কারণ ময়লার স্তূপ। লঞ্চ ঘাট আর খেয়া ঘাটের মাঝামাঝি নদীর পানিতে জমে রয়েছে বহু ময়লা। ময়লার স্তূপ দেখেই বুঝা যাচ্ছে বহু দিনের জমানো ময়লা। দেখার কেউ নেই, ময়লা সরাবারও কেও নেই।
একবার কল্পনা করে দেখুন তো শীতলক্ষ্যা নদী বিহীন নারায়ণগঞ্জ শহরকে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই শহরের প্রাণ শীতলক্ষ্যা নদীকে তীলে তীলে হত্যা করে চলেছি। নারায়ণগঞ্জ শহরের পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে হলে প্রথমেই শীতলক্ষ্যাকে বাঁচাতে হবে। নারায়ণগঞ্জবাসী ঐক্যবদ্ধ হলে এখনো সময় রয়েছে মৃত প্রায় শীলতক্ষ্যাকে বাঁচিয়ে তোলার। শীতলক্ষ্যা বাঁচলেই বাঁচবে নারায়ণগঞ্জ।
আপনার মতামত লিখুন :