প্রাচ্যের ড্যান্ডি-খ্যাত নারায়ণগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘জগৎবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার’। এটি সোনাই ঘোষের মিষ্টির দোকান হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৬০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে দই ও মিষ্টি বিক্রি করে আসছেন তাঁরা। মিষ্টিপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে এই দোকানের মিষ্টি।
১৯৬৪ সালে শহরের ৮১ নম্বর বঙ্গবন্ধু সড়কের উকিলপাড়া এলাকায় মতিউল হকের টিনের দোকান ভাড়া নিয়ে ‘জগৎবন্ধু মিষ্টান্ন ভান্ডার’ চালু করেন সোনাতন ঘোষ। সোনাতন ঘোষ নিজে মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন। শুরুতে আগুনে ছেঁকা আটার রুটি, পরোটা, ভাজি, হালুয়া ও বুটের ডাল এবং মিষ্টির মধ্যে লাল মোহন, রসগোল্লা, কালোজাম ও চমচম বিক্রি করতেন তিনি। সেই সময় তাঁর দোকানের মিষ্টির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সোনাতন ঘোষকে সবাই ‘সোনাই ঘোষ’ নামে ডাকতেন। সেই থেকে তাঁর মিষ্টির দোকানের সুনাম।
১৯৯৬ সালে সোনাই ঘোষের মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র ছেলে সুখদেব ঘোষ ব্যবসার হাল ধরেন। ৩০ বছর আগে পরোটা-ভাজি বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে শুধু দই-মিষ্টির ব্যবসা ধরে রাখেন। তবে আগের চেয়ে মিষ্টির পদের সংখ্যা বেড়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে কলকাতা ঘুরতে গিয়ে সেখানে অনেক ধরনের মিষ্টি দেখি। সেই মিষ্টি খেতেও সুস্বাদু ছিল। সেই মিষ্টির বিষয়ে এসে বাবাকে বলি। কিন্তু বাবা সে বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি। বাবা মারা যাওয়ার পর যখন মিষ্টির ব্যবসায় ঢুকলাম, তখন বাবার ব্যবসার সুনাম ধরে রেখে মিষ্টির পদের সংখ্যা বাড়ানো শুরু করি।’
সুখদেব ঘোষ বলেন, কেজিপ্রতি লাল মোহন, ক্ষীরের চপ ও ছানার আমিতি ৪০০ টাকা; রসগোল্লা, কালোজাম ও চমচম ৩৬০ টাকা; মালাইকারি ও ক্ষীর তোয়া ৫০০ টাকা; ক্ষীর মাদ্রাজ ৭০০ টাকা, কাঁচা গোল্লা ও সন্দেশ ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক কেজি ওজনের দই ২৬০ টাকা এবং দুই কেজি ওজনের দই ৫২০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন এই দোকানে ২০ থেকে ২৫ মণ দুধের মিষ্টি ও দই বানান তাঁরা।
গত ৫০ বছর এই দোকানে কাজ করছেন মধু ঘোষ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে মিষ্টি তৈরির কারিগরদের মধ্যে সোনাই ঘোষ অন্যতম ছিলেন। তাঁর মতো কেউ মিষ্টি তৈরি করতে পারতেন না। দোকানে এখন মিষ্টি তৈরির কারিগর ছয়জন।
১০ বছর বয়স থেকে সোনাই ঘোষের দোকানে মিষ্টি খান ৪৯ বছর বয়সী উকিলপাড়া এলাকার নির্মল সিং। তিনি বলেন, ‘এক টাকা দামের পরোটা খেয়েছি। দুধ ছানা, লাল মোহন, রসগোল্লাসহ এই দোকানের মিষ্টি খেতে অনেক মানুষ ভিড় করেন।’
সোনাই ঘোষের মিষ্টি ও দই জেলার ঐতিহ্যের অংশ বলে উল্লেখ করেন নারায়ণগঞ্জ কলেজের উপাধ্যক্ষ ফজলুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁরা মান ধরে রেখেছেন। এ কারণে মানুষ সকাল থেকে তাঁদের দোকানের দই-মিষ্টি কেনার জন্য ভিড় করেন।
আপনার মতামত লিখুন :