News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

সজীবের শখের ছাদবাগানে আঙুরের সমাহার


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৩, ১১:০৮ পিএম সজীবের শখের ছাদবাগানে আঙুরের সমাহার

শখের বশে বাসার ছাদে বাগান করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক এলাকার সজীব চৌধুরী। সেই শখ থেকে বাগানের জন্য বেছেও নিয়েছিলেন পছন্দের ফল আঙুর ফলের চারা। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টির মতো গাছ রয়েছে। যার মধ্যে আঙুর গাছের চারাই বেশি। সেই সাথে তার এই বাগানে প্রায় ৩৫ জাতের আঙুর ফল রয়েছে।

বাগানের প্রায় প্রত্যেকটি গাছেই থোকায় থোকায় ছেয়ে গেছে আঙুর। তবে বাণিজ্যিকভাবে আঙুরের ফলন না হলেও বাসার চাহিদা মেটানো হচ্ছে এই বাগান থেকে। অনেক সময় আত্মীয় স্বজনদের বাসাতেও উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে এই আঙুর ফল। সেই সাথে বাসার আশপাশ এলাকা থেকে আসা পাখিদেরও চাহিদা পূরণ হচ্ছে এই বাগান থেকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফতুল্লা বিসিক এলাকার শহীদুল ইসলামের চারতলা বিশিষ্ট ভবনের ছাদে সজীব চৌধুরী একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। শহীদুল ইসলাম তার ভগ্নিপতি। সেই সুবাদে তার বাসার ছাদে বাগান করেছেন। আর এই বাগানে আঙুর ছাড়াও রয়েছে আনার গাছ, আম, আমলকি, পমেলো ও বারমাসি কাঠালসহ দেশি বিদেশি প্রায় ২০ থেকে ২৫ রকমের ফলের চারা।

এসকল ফলের চারায় বাসার ছাদটির চারপাশ সবুজে ছেয়ে গেছে। আঙুরের গাছগুলোর ডালে ডালে ঝুলছে আঙুরের থোকা। বিভিন্ন গাছের সমাহারের কারণে বাগানটি দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় প্রতিনিয়ত তা দেখতে শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষজনও ছুটে আসছেন। আত্মীয় স্বজনরাও দেখতে আসছেন বাগানটি। অনেকে আবার বাগান তৈরিতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বাগান করা প্রসঙ্গে সজীব চৌধুরী বলেন, মূলত শখের বশেই বাগান শুরু করেছিলাম। আমার বাগান করার বয়স ৬ বছর। প্রথমদিকে কোনো স্থায়ী বাগান করতে পারিনি কারণ আমি প্রবাসী ছিলাম। প্রবাসে থাকাবস্থায় বাগান করার চেষ্টা করা হলেও সেটা সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। তবে প্রবাসে থাকার সময়ে বাগান সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতাম। তখন থেকেই মনে মনে বাগান করার ইচ্ছা করি।

তিনি বলেন, যখন স্থায়ীভাবে দেশে আসার চিন্তা করি তখন বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। সেই সাথে আমার পছন্দের ফল আঙুরকে বেছে নেই এবং আঙুরের বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। তারপর দেশের বাইরে থাকা কয়েকজন শুভাকাক্সক্ষীর কাছ থেকে আঙ্গুর গাছের চারা সংগ্রহ করেছি। নিউক্রেন, ইতালি, তুরস্ক ও জাপান থেকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে আঙ্গুর গাছের চারা সংগ্রহ করেছি। একটা দুইটা করে সংগ্রহ করতে করতে ১৬৩ জাতের আঙ্গুর সংগ্রহ করেছি।

আঙুরের বাগান করতে চাইলে করণীয় প্রসঙ্গে সজীব বলেন, কেউ যদি বাগান করতে চায় সে বাগান করতে পারে। আঙুর বাগানই করতে হবে এমনটা নয়। আঙ্গুল বাগান করেও লাভবান হওয়া যাবে। নিজস্ব যতেœ বাসার ছাদে কিংবা আঙ্গিনায় করতে পারেন। বাংলাদেশে আঙুরের ভালো ফলন হচ্ছে। আঙুরের জন্য তিনবছর অপেক্ষা করতে হবে। তিন বছর অপেক্ষার পর ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, বাসায় আত্মীয়-স্বজন এলে এখান থেকেই সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অনেক সময় পাখিরাও এসে আঙ্গুর খেয়ে থাকে। তাদের জন্য কয়েকটা থোকা রেখে খেয়েছি। শখের বশেই বাগানটি করা হয়েছিল। এখন আমার কাছে সংগ্রহ এত পরিমাণ হয়েছে সেগুলো আমি এখন বিস্তার করার চেষ্টা করছি। সেলক্ষ্যে ফেসবুকে সাজ গার্ডেন নামে একটি গ্রুপ খোলা হয়েছে। আমাদের এই গ্রুপে অনেক বাগানি রয়েছে। তাঁরা অনেকেই আমাদের এখান থেকে বিনামূল্যে এসকল জাত সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগুলো উপহার দিয়ে আসছি।

আরিফিন আজাদ নামে একজন বাগানি বলেন, সজীব চৌধুরী বিভিন্ন রকমের আঙুর নিয়ে কাজ করছেন। তিনি একজন গাছ পাগল মানুষ। একজন মানুষ কতটা গাছপাগল হতে পারে তাকে না দেখলে বুঝা যাবে না। যে সকল ফল আমরা সহজে ক্রয় করতে পারি না, যা সচরাচর দেখা যায় না সেগুলো তিনি সংগ্রহ করে নিজের বাগানে উৎপাদন করছেন। তিনি তার ব্যবসা রেখে গাছের পরিচর্যা করেন। অনেক সময়ে রাতেও এসে দেখি তিনি কাজ করছেন। তিনি খুব অমায়িক মানুষ। মানুষজনকে বিনামূল্যে গাছের চারা দিয়ে থাকেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার তাহমিনা আক্তার রিনা বলেন, আমরা বিষয়টি খবর নিয়ে দেখছি। যদি উনার আঙুর ভালো হয়ে থাকে তাহলে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো। আঙুরে সম্ভাবনা তৈরি হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আঙুর আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই উৎপাদন হয়। তবে মিষ্টি হয় না টক হয়ে যায়। এখানে যে আঙুর চাষ করা হচ্ছে সেটা নাকি মিষ্টি হয় শুনেছি। যদি এটা মিষ্টি হয়ে থাকে তাহলে তো খুবই ভালো। আমি নিজে এ বিষয়ে সজীব চৌধুরীর সাথে কথা বলবো।

তিনি আরও বলেন, যদি আঙুর ফল মিষ্টি হয়, তাহলে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশে আমদানি নির্ভর আঙুর। সে জায়গায় যদি আমরা কিছুটা হলেও আঙুরের চাহিদা পূরণ করতে পারি অবশ্যই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। যদি মিষ্টি ধরে রাখা যায় তাহলে বাসার ছাদবাগানগুলোতে চাষ করে বাসার চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

Islams Group
Islam's Group