News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

জেলখানায় নারায়ণগঞ্জের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঈদ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | এস এম শহিদুল্লাহ (লেখক ও গবেষক) : প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩, ১১:২৫ পিএম জেলখানায় নারায়ণগঞ্জের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঈদ

ছয় দফাকে বলা হয়ে থাকে বাঙালির মুক্তির সনদ। ছয় দফা আন্দোলনে স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। ছয় দফার পক্ষে গণজাগরণের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশব্যাপী অনেকগুলো জনসভা করেন। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ টাউন হল মাঠে (বর্তমান এখানে শহীদ জিয়া হল প্রতিষ্ঠিত) ৮ মে (১৯৬৬) বিরাট জনসভা করেন। সভাশেষে শেখ মুজিব নারায়ণগঞ্জ থেকে সেই রাত্রেই ঢাকায় ফেরার পর সহকর্মীদেরসহ গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দি হন। বন্দি অবস্থায় শেখ মুজিব ১৯৬৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দসহ ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করেন।

উল্লেখ্য যে, ১৩ ফেব্রুয়ারি (১৯৬৭) যথাসম্ভব ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের সম্ভাব্য তারিখ ছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর সিদ্ধান্তে জেলখানায় সে ঈদ উদযাপনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল ১২ ফেব্রুয়ারি। সে কথা উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধুর লেখায়।

সে লেখা উদ্ধৃত করা হলো :

১১ তারিখে রেণু এসেছে ছেলে মেয়ে নিয়ে দেখা করতে। আগামী ১৩ই ঈদের নামাজ। ছেলেমেয়ারা ঈদের কাপড় নিবে না। ঈদ করবে না, কারণ আমি জেলে। ওদের বললাম, তোমরা ঈদ উদ্যাপন কর।

রাত্র ১০টায় হৈ চৈ, আগামীকাল ঈদ হবে

১২ই সকালবেলা জেলের মধ্যে ঈদ হবে, কারণ সরকারের হুকুম। অনেক সিপাহি ও জেল কর্মচারী রোজা ভাঙতে রাজি হয় নাই। তবে কয়েদিদের নামাজ পড়তেই হবে, ঈদ করতেই হবে। শুনলাম পশ্চিম পাকিস্তানে সরকারি লোক চাঁদ দেখেছে। পশ্চিম পাকিস্তানে উন্নতি হলে পূর্ব বাংলার উন্নতি হয়! হাজার মাইল দূরে পশ্চিম পাকিস্তানে চাঁদ দেখেছে, এখানে নামাজ পড়তেই হবে। আমাদের আবার নামাজ কি! তবুও নামাজে গেলাম, কারণ সহকর্মীদের সাথে দেখা হবে। এক জেলে থেকেও আমার নিজের দলের নেতা ও কর্মীদের সাথে দেখা করার উপায় নাই। আমি এক পার্শ্বে আর অন্যান্যরা অন্য পার্শ্বে।

রাজনৈতিক বন্দিদের বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা করে রাখা হয়। ২ নম্বর ব্লকে শ্রমিক কর্মীদেরই বেশি রাখা হয়েছে। নামাজের আগে রুহুল আমিন, সহিদ (তেজগাঁও), আদমজীর সফি (নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিলের তৎকালীন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা) আরও অনেকে ছুটে এল আমার কাছে।...

১০ সেল থেকে শামসুল হক, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মোমিন, ওবায়দুর রহমান, মোল্লা জালাল, মহীউদ্দিন (খোকা) (নারায়ণগঞ্জ), সিরাজ, হারুন, সুলতান এসেছে। দেখা হয়ে গেল, কিছু সময় আলাপও হলো। এরা সকলেই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মী। রফিকুল ইসলাম, বজলুর রহমান (নারায়ণগঞ্জ) ও শাহ মোয়াজ্জেম নামাজে আসে নাই।

আমার কাছাকাছিই থাকে ছাত্রলীগ কর্মী নূরে আলম সিদ্দিকী ও খুলনার কামরুজ্জামান, ছাত্র ইউনিয়নের রাশেদ খান মেনন এবং আওয়ামী লীগের নূরুল ইসলাম। বাবু চিত্তরঞ্জন সুতারও আছেন। আমার পায়ে ব্যথা, তাই বসে বসেই মিললাম সকলের সাথে। কারাগার থেকেই দেশবাসী ও সহকর্মীদের জানাই ঈদ মোবারক। পূর্ব বাংলার লোক সেইদিনই ঈদের আনন্দ ভোগ করতে পারবে, যেদিন তারা দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে, এবং দেশের সত্যিকারের নাগরিক হতে পারবে।

নামাজ আমাদের আজই পড়তে হয়েছে। বাড়ির থেকে খাওয়া-দাওয়া কিছুই আসে নাই। কারণ বাইরের লোক তো আমাদের মত বন্দি না, তারা ১৩ তারিখেই ঈদ করবে। ১৩ তারিখেই শতকরা ৯০ জন লোক ঈদ করেছে। কিন্তু কারাগারে খাওয়ার বন্দোবস্তও ১২ তারিখেই হয়েছে।

Islams Group
Islam's Group