প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তবে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা ও নববর্ষের সব ধরনের অনুষ্ঠান ক্যাম্পাসের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১২ এপ্রিল) সকালে নগরীর শেখ রাসেল পার্কের পাশে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে নির্মিত নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এদিকে রোজার জন্যে এই প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা ছুটিতে থাকায় কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকেই সামাল দিতে হচ্ছে নববর্ষের পুরো আয়োজন। অথচ এর পরও থেমে নেই শিক্ষার্থীরা। তাঁরা পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেখা যায়, চারুকলা প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা তাদের হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় ছন ও মাটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব। বাহারি রং দিয়ে তৈরি করছেন বর্ণিল মুখোশ, মাছ, ঘোড়া ও পুতুল। মূলত এসব দিয়েই আয়োজিত হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
এদিকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এরারের বাংলা নববর্ষের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, রবি ঠাকুরের কবিতার একটি অংশকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে। যার একটি লাইন ‘বরিষ ধারা মাঝে শান্তির বারি।’
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অনার্সের শিক্ষার্থী সজীব ঘোষ বলেন, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই রোজার কারণে বাড়িতে ছুটিতে চলে গেছে। তাই আমরা ভেবেছিলাম এবার তেমন কোনো স্ট্রাকচার বানাবো না। তবে পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা স্ট্রাকচার বানাবো। ইতিমধ্যে সঁড়া হয়েছে, বাঘ হয়েছে, পেঁচা হয়েছে। তাছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আমাদের আরো অনেক আয়োজন থাকবে বাংলা নববর্ষের দিন।
অভি নয়ন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এবারো চারুকলার শিক্ষার্থীরা নারায়ণগঞ্জে বাংলা নববর্ষের আনুষ্ঠান পালন করবো। তবে রোজার কারণে আমাদের আয়োজনটা শুধু ক্যাম্পাসের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সামসুল আলম আজাদ বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা পহেলা বৈশাখ করতে যাচ্ছি। তাই মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সকল আয়োজন আমরা প্রায় সম্পন্ন করেছি। নববর্ষের দিন এখানে প্রভাতী অনুষ্ঠান হবে। শিশু-কিশোররা খেলাঘরের আসর করবে এবং এসব দেখতে সংস্কৃতিকর্মীরাসহ সকলে এখানে আসবে।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতির মধ্যে যে আমাদের জীবন। নগর জীবন থেকে সেই জীবন যে হারিয়ে গেছে, তাকে আমরা ফিরে পেতে চাই এই দিবসগুলোর মাধ্যমে। আর এটিই বাস্তবতা। কারণ মানুষ তার প্রকৃতির সাথে যেই সম্পর্ক সেটা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আপনি একটি জিনিস খেয়াল করে দেখবেন যে, গ্রাম অঞ্চলে কিন্তু পহেলা বৈশাখের প্রয়োজন হয় না। কারণ সে সংস্কৃতির মধ্যেই থাকে। তবে আমরা অনেকটা বিচ্যুত হয়ে গেছি। তাই এই দিনে অনেকটা হাহাকার করি। এইটা আবার অনেক মানুষ বুঝতে পারে না। তাঁরা ভাবে অন্য কিছু হয়ে যাচ্ছে-কিনা! আসলে তা না। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্কচ্যুততা সেইটিকে আমরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি বাংলা নববর্ষের দিনে।
আপনার মতামত লিখুন :