মহান মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর ১৯৭২ সালে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদীর বক্ষে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে ভ্রমন করেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইন্দিরা গান্ধীকে আঁকাবাঁকা নদী দিয়ে ঘেরা গ্রামবাংলা দেখানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্যে বঙ্গবন্ধু তাঁকে জন্মদিনের পরদিন নৌবিহারে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সফরে তৎকালীন ভারত ও বাংলাদেশের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ রোববারের সংবাদ নামের পত্রিকায় বাসস এর বরাত দিয়ে প্রকাশিত ওই সংবাদটির শিরোনাম ছিল ‘শীতলক্ষ্যা বক্ষে ৬ ঘন্টা’। প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় যা পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়, নদীমাতৃক বাংলাদেশের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে গভীরভাবে মুগ্ধ করেছে। ওই বছরের ১৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যায় ছ’ঘন্টা ধরে পঁচিশ মাইল নৌবিহার শেষে শ্রীমতী গান্ধী আইডব্লিউটিএ’র মোটর বোট ‘ইনভেষ্টিগেটর’-এর মন্তব্য পত্রে তাঁর অনুভূতি লিপিবদ্ধ করেছেন।
মন্তব্যপত্রে শ্রীমতী গান্ধী লিখেছিলেন, “মৃদুমন্দ শীতল হাওয়া, নদীর প্রশান্ত রূপ আর গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য ধ্বংসযজ্ঞের বিষন্ন স্মৃতিকে ধুয়ে মুছে দেয়।” তিনি কামনা করেছেন, আপনাদের মহান নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেন এক সমৃদ্ধির ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।”
শ্রীমতী গান্ধীকে আঁকাবাঁকা নদী দিয়ে ঘেরা গ্রামবাংলা দেখানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্যে বঙ্গবন্ধু তাঁকে নৌবিহারে নিয়ে গেছেন। তাঁরা নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর জেটি থেকে ‘ইনভেষ্টিগেটর’ এ করে খ্যাতনামা বন্দর চাঁদপুরের মোহনপুর পর্যন্ত নৌবিহার করেন। ইনভেষ্টিগেটরের পেছনে পেছনে যাচ্ছিল ‘সাঈদ’ ও ‘সুরাইয়া’ এবং এদের অনুসরন করছিল ‘মোনিরুল হক’। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন শফি সামগ্রিক পরিচালনায় ছিলেন। নৌবিহারে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ও আব্দুস সামাদ আজাদ, শ্রী পি.এন হাকসার, রুহুল কুদ্দুস, বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম, ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. এস. চক্রবর্তী, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রী টি রিন কাউল, বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রহমান সোবহান, ড. মোশারফ হোসেন ও ওয়াপদার চেয়ারম্যান বি, এম, আব্বাস।
তথ্যসূত্র : আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত রোববারের সংবাদ পত্রিকার কপি।
আপনার মতামত লিখুন :