শিল্পবাণিজ্যিক নগর ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ। এতোদিন নারায়ণগঞ্জবাসীর তেমন কোনো বিনোদনকেন্দ্র ছিল না। তবে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জবাসীর বিনোদনের খোরাক মেটাচ্ছে ৫৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন শেখ রাসেল পার্ক। এই এক পার্কে বদলে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকার চিত্র। এদিকে নির্মাণাধীন শেখ রাসেল পার্কে বিকেল হলেই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে ছুটির দিনে পার্কটিতে ঢল নামে দর্শনার্থীদের।
শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেলে শেখ রাসেল পার্কের সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে, স্ট্রিট লাইট, সিটিং প্যাভিলিয়ন ও পরিবেশবান্ধব সবুজ গাছপালা রোপণ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ৪টি ভিউইং ডেক ও ৬টি ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। উন্মুক্ত পরিবেশে যে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। লেকটির সৌন্দর্যবর্ধন করে দাঁড়িয়ে আছে শেখ রাসেলের ম্যুরাল। লেকের দুই পাশে লোকজনের পারাপারের জন্য রয়েছে একটি নয়নাভিরাম ব্রিজ। খেলাধুলার জন্য ১টি খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা পাবলিক টয়লেট। এছাড়াও রয়েছে বোট ক্লাব, সুইমিং পুল, ওয়াটার গার্ডেন, জিমন্যাস্টিক ক্লাব, ড্রাই ফাউন্টেন, স্কেটিং জোন, সাইকেল লেনসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ। এছাড়াও পার্কের অভ্যন্তরে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে বিদ্যমান চারুকলা ভবনটির স্থলে নতুনভাবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি পরিবেশবান্ধব চারুকলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন বৃষ্টির পানি ধারণের জন্য পার্কটি সংরক্ষিত জলাধার কেন্দ্রের চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়া লেকটি অতিরিক্ত পুকুর হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপনের জন্য পানি সরবরাহের একমাত্র প্রধান উৎস হিসেবে এ লেকটি মুখ্য ভূমিকা রাখবে। পার্কটির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই শেখ রাসেল পার্কটি এখন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। খোলামেলা পরিবেশে স্নিগ্ধ প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে নারায়ণগঞ্জের আশেপাশের এলাকার মানুষরা এই স্থানটিতে ঘুরতে আসেন। তবে এই পার্কের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর অন্যতম বিনোদন স্পটে পরিণত হবে এমনটাই আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, পার্কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এ পার্কটি নির্মিত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগের জিমখানা এলাকায় অত্যন্ত মনোরোম পরিবেশে এ পার্কটির অবস্থান। এটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা ৬৭ লাখ টাকা। পার্কটি উদ্বোধন হওয়ার আগেই দর্শনার্থীদের মন কেড়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও নগরবাসীর জন্য এ পার্কটি নির্মিত হওয়ায় নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন খুবই আনন্দিত হয়েছেন।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব ঘনসবুজ ঘেরা ছায়া ঢাকা, নির্মল পানি সমৃদ্ধ লেক বেষ্টিত জিমখানায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের নামে শেখ রাসেল পার্ক এখন নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্থানে চিহ্নিত হয়েছে। এ পার্কের আয়তন প্রায় ১৮ একর। বর্তমান লেকটি একদা পরিত্যক্ত জলাশয় অথবা ডোবা ছিল। প্রতিনিয়ত মানুষের বর্জ্য ফেলার কারণে লেকটি ডাম্পিং স্থান ও মশা-মাছির প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এছাড়াও অবৈধ দখলের ফলে জিমখানা লেক এলাকার পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো মাদক ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। ফলে লেক এলাকাটির আশপাশে দূষণ ও অসামাজিক কর্মকা-ের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল।
এদিকে লেকটিকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। লেকটির পাশে রয়েছে ভাসমান বিভিন্ন খাবার যেমন- বাদাম, জিলাপী, শরবত, চটপটি, ফুসকা, ভেলপুরি, আচারসহ ছোট বড় নানা ধরণের ফাস্টফুডের দোকান।
পার্কটিতে ঘুরতে আসা অধিকাংশ দর্শনার্থী জানান, লেকের নির্মল বাতাস, নিরিবিলি পরিবেশ, টলটলে জলরাশি, পরিবেশবান্ধব নানা প্রজাতির গাছপালা, হাঁটাহাঁটির করার মতো এমন প্রশস্ত জায়গা নারায়ণগঞ্জের আর কোথাও নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য স্বচক্ষে অবলোকন করতে প্রতিনিয়ত এখানে ছুটে আসেন তাঁরা।
বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতেছেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে কথা হলে আশরাফুল আলম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, অবসর সময়ে তাঁরা এখানে আড্ডা দেন। আজ শুক্রবার হওয়ায় সব বন্ধুরা একসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ গল্প করার সুযোগ হয়েছে। আর গল্প বা আড্ডার জন্য আমার মতে এটি সেরা জায়গা।
পরিবার নিয়ে নদী ভ্রমণ করতে আসা প্রিয়া আক্তার নামে এক দর্শনার্থী জানান, পূর্বে এখানে রাস্তা নিচু থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকতো। এছাড়া তখন অনেক ঝোঁপঝাড় থাকায় এটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ছিল। তবে এই লেক নির্মাণের পর থেকে এটি এখন বিনোদনের জায়গায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন।
স্বপন-মৌমিতা নামের এক দম্পতি ঘুরতে এসেছেন এখানে। কথা হলে তাঁরা জানান, পার্কটি খুবই সুন্দর। ব্রীজগুলোর নান্দনিক ডিজাইনের কারণে আরো বেশি ভালো লাগে। আমাদের সদ্য বিবাহ হয়েছে। কর্মব্যস্ততার কারণে ঘোরাঘুরির জন্য শুক্রবার দিনটিকে বেছে নিয়েছি। পূর্বে ছুটির দিনে নদীর পাড়ে ঘুরতে গেলেও এখন এই লেকে বেশি আসা হয়ে থাকে। তবে এই লেকে যদি কায়াকিং অথবা পায়ে চালিত বোটের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে পরিবার নিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য আরো মনোমুগ্ধকর হতো।
আপনার মতামত লিখুন :