নগরায়নের এই যুগে পৌষের এই গ্রামীণ আমেজে কিছুটা ভাটা পড়লেও মুখরোচক বাহারি সব পিঠার চাহিদা পূরণ করছে ভাসমান পিঠার দোকানগুলো। হাত বাড়ালেই বাসা বাড়ির নিচে কিংবা পথের দ্বারে মিলছে এইসব দোকানগুলো।
নারায়ণগঞ্জেও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রধান শহর থেকে শুরু করে অলিতে গলিতে সড়কে দেখা মিলছে ভাসমান দুই চাকার অথবা স্থায়ী চুলার যতসব মৌসুমী পিঠার দোকানের। দোকানগুলোতে মিলছে ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা, খাজের পিঠা, সন্দেশ পিঠা, নারিকেল পিঠা, সাথে জিভেজল আনার মতন হরেক রকমের ভর্তা যেমন শুঁটকির ভর্তা, সরিষার ভর্তা, ধনিয়া পাতার ভর্তা, লাল মরিচ, কাঁচামরিচের, কালো জিরার ভর্তা।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কিছু মৌসুমি পিঠা ব্যাবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীতের এই সময়টাতে শহরের মানুষের পিঠা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে যায় তাই তাঁরা অন্য পেশা ছেড়ে শীতকালীন এই সময়টাতে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান।
ভোলার বাসিন্দা রাবেয়া সুলতানা তিন বছর হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এ ভাড়া বাসায় থাকছেন, স্বামী কাঠমিস্ত্রি, দুই মেয়ে, এক ছেলেসহ পাঁচ জনের পরিবারের সব খরচ একা তার স্বামীর পক্ষে চালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ায় এক মাস হলো পিঠার দোকান দিয়েছেন তিনি।
রাবেয়া সুলতানা বলেন, ‘বাড়িওয়ালার থেকে এই জায়গাটা দোকান করার জন্য ভাড়া নিয়েছি। আপাতত টিনের ছাউনি দিয়ে তিনটি স্থায়ী মাটির চুলা বসিয়েছি। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করি। এখানে মূলত চিতই পিঠা বিক্রি করি কিন্তু অনেকেই ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, তেল পিঠাসহ অন্যান্য পিঠা বানানোর অর্ডার দিলে বানিয়ে দেই।’
সেই দোকানের এক অপেক্ষমান নারী ক্রেতা জানান, ‘বাসার সব কাজ সামলিয়ে পিঠা বানানোটা বেশ ঝামেলার তার কাছে, তাই দুধচিতই বানানোর জন্য এখান থেকেই গরম গরম চিতই কিনতে এসেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জের আরো এক নারী পিঠা ব্যবসায়ী বিক্রি করছেন চিতই, ডিম চিতই, ভাপা পিঠা, পাটিশাপটা। এই দোকানে রয়েছে মাটিতে মাদুর পেতে বসে গ্রামীণ আবহকে অনুভব করে গরম ধোঁয়াউঠা পিঠা খাওয়ার ব্যবস্থা সাথে পাওয়া যাবে বিশুদ্ধ পানিও।
ভূমিপল্লীর আরেক পিঠা ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন চার বছর থেকে শীত মৌসুমে ভাপা পিঠা বিক্রি করে আসছেন। তিনি দৈনিক ১০-১২ কেজি চালের গুড়ো দিয়ে পিঠা তৈরি করেন। প্রতি কেজি চালের গুড়ো থেকে তৈরি হয় ১৭-১৮টি পিঠা। চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে পিঠা তৈরির সব উপকরণ যেখানে কিনতে হচ্ছে বাড়তি দাম দিয়ে সেখানে মোতালেব হোসেন তার লাভকে সীমিত রেখে এখনো প্রতিটি ভাপা পিঠা ১০ টাকা করেই বিক্রি করে যাচ্ছেন। তিনি প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৮০০-২০০০ টাকার পিঠা বিক্রি করেন। এতে তার লাভ হয় ৪০০-৫০০ টাকা। পিঠা তৈরি ছাড়াও তিনি সকালের সময়টাতে বিভিন্ন বাসাবাড়ির পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেন। আর তার স্ত্রী মেয়ে পিঠা তৈরির উপকরণ প্রস্তুত করে রাখেন।
তিনি আরও জানান, চার বছর আগে বন্ধুর পিঠার দোকান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বন্ধুর থেকে পিঠা বানানোর কৌশল শিখে পিঠার দোকান দেন। এতে তার পরিবারের অভাব অনটন দূর হয়েছে বলে জানান তিনি।
পিঠার খেতে আসা অনিক নামের এক যুবক বলেন, ‘কাজের কারণে পরিবার ছেড়ে এখানে থাকি। শীতের এই সময়টায় মায়ের হাতের বানানো পিঠা খুব মিস করি। প্রায়শই অফিসে থেকে ফেরার পথে বাহিরের এসব পিঠা খাই আর মায়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলি।’
আপনার মতামত লিখুন :