গত ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর। মাসব্যাপী এই মেলা দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের মেলায় আগত দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে রাজা চা। প্রতিনিয়ত রাজা মামার চায়ের স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই স্টলটিতে ভিড় জমাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র চোখে পড়ে।
জানা যায়, তার আসল নাম আজহার উদ্দিন। বসয় ৪৩ বছর। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নওধার গ্রামে। তার বাবার নাম আলীম উদ্দিন। ছোটবেলা থেকে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে তিনি আজ এই অবস্থায় এসেছেন। অভাব ঘুচাতে পাড়ি দেন দুবাইতে। ২০১৮ সালে দেশে ফিরে তিনি চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে সারাদেশে তার ১৮টি ব্রাঞ্চ রয়েছে। ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়াতেও চায়ের একটি ব্রাঞ্চ দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। রাজা চা বিক্রি করে তিনি এতোই জনপ্রিয় হয়েছেন যে, তার সঙ্গে সেলফি তুলতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।
কথা হলে আজহার উদ্দিন জানান, তার বাবা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। জায়গা জমি বিক্রি করে তিনি বিদেশ পাড়ি জমান। তখন তার ধারণা ছিল বিদেশ গিয়ে তিনি প্রতি মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু সে সুযোগ তার হয়নি। দুবাইতে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে কাজ করার সুযোগ হয় তার। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফিরে গিয়ে এমন একটি চায়ের দোকান দিবেন। প্রথমে তার ধারণা ছিল দেশের মানুষ তার দামি চা খাবে কিনা। কিন্তু তার তৈরি চায়ের স্বাদে মুগ্ধ হয়ে ক্রেতারা তাকে রাজা মামা উপাধি দিয়েছেন।
তার চায়ের বিশেষত্ব হচ্ছে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, জাফরান, নানা জাতের মসলা, তাল মিছরি, গরুর দুধ ও গুঁড়া দুধ মেশানো হয়। এছাড়া এটি বালুর তাপে গরম করা হয়। তার চা কেন এতো বিখ্যাত তা না বললেও তিনি জানান, চায়ে তিনি যে জাফরান ব্যবহার করে থাকেন ওই প্রতি কেজি জাফরানের দাম ৯-১০ লাখ টাকা। তার চায়ে ব্যবহারকৃত প্রত্যেকটি উপাদানই খুবই দামি। তবে সে সুলভ মূল্যে এই রাজা চা বিক্রি করে থাকেন। তার তৈরি এই চায়ের দাম প্রতি কাপ ৫০ টাকা।
তিনি আরও জানান, যখন আমি বিদেশ থেকে দেশে ফিরে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন গ্রামের অনেক মানুষ আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করেছিল। কিন্তু আজ দেশের মানুষ আমাকে সত্যিই রাজা বানিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তার ১৮টি ব্রাঞ্চে ৭২ জন স্টাফ রয়েছেন। যাদের প্রত্যেককে তিনি ১২-২৮ হাজার টাকা সম্মানী দিয়ে থাকেন।
চা খেতে আসা নাদিম হোসেন নামের এক যুবক জানান, আমি আরো অন্য সব চায়ের দোকানের স্বাদ নিয়েছি কিন্তু তার দোকানের চায়ের স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। এক কথা বলতে গেলে অসাধারণ।
নুসরাত জাহান নামের আরেক তরুণী জানান, রাজা মামার চা সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। তিনি যেভাবে যত্ন সহকারে চা তৈরি করেন ওই হিসেবে চায়ের দাম কমই আমি মনে করি।
এবারের মেলা গত বছরের তুলনায় পরিসর, আয়োজন ও সাজসজ্জায় বড় পরিবর্তন এসেছে। গত বছর মেলায় স্টল ছিল ২২৫টি। এবার দেশি-বিদেশী স্টল বসছে ৩৩১টি। এবারের মেলায় মোট স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৪৮৩টি। এর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ১১২টি, মিনি প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ১২৮ ও বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টলের সংখ্যা ২৪৩টি। এর মধ্যে বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৭টি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি ও বিদেশি প্রিমিয়ার স্টলের সংখ্যা ১৭টি।
আপনার মতামত লিখুন :