সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে মিশনপাড়ার হোসিয়ারী সমিতির কমিউনিটি সেন্টারে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের নেতারা। অথচ নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হোসিয়ারী পল্লী অবস্থিত নয়ামাটি, ২ নং রেলগেট ও উকিলপাড়া এলাকায়। তাই এসব ঝুঁকিপূর্ণ জায়গার পরিবর্তে কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে, নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। একই সাথে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাকে অনেক হোসিয়ারী মালিক ও শ্রমিকেরা ফটোসেশন আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেছেন। হোসিয়ারী শ্রমিকেরা জানান, নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে হলে হোসিয়ারীতে সরেজমিনে এসে শ্রমিকদের নিয়ে তারপর করতে হবে। কিন্তু কমিউনিটি সেন্টারে এসব প্রশিক্ষণ হলে শ্রমিকরা আগুন নেভানো শিখবে তো দূরের কথা, সেটা চোখেও দেখবেনা।
১৫ সে সোমবার সকালে এফবিসিসিআই সেইফটি কাউন্সিল এন্ড আই.এল.ও‘র সহযোগীতায় ও অর্থায়নে “ফায়ার, সেইফটি, রেসকিউ এন্ড ফার্স্টএইড” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেন বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন।
নয়ামাটির একটি হোসিয়ারীর ফ্লোর ইনচার্জ রাকিব হাসান। তিনি বলেন, এটা অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। আগুন লাগলে একটা হোসিয়ারী শ্রমিক কিভাবে সরু সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসবে সেটার প্রশিক্ষণ তো হোসিয়ারী সমিতির কমিউনিটি সেন্টারে দেওয়া সম্ভব না। এটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে। এগুলো আসলে ফটোসেশন। আর কিছুনা। তারা মালিক-মাহাজনরা মিলে আগুন নিভানোর প্রশিক্ষণ করছে। অথচ নয়ামাটির হোসিয়ারীতে কাজ করে শ্রমিকেরা। শিখাইলে শ্রমিকদের শিখাইতে হবে যে, কিভাবে আগুন বন্ধ করতে হয়।
২ নং রেলগেট এলাকায় অবস্থিত দেওভোগ মার্কেটের পাইকারী পোশাক ব্যবসায়ী হানিফ শিকদার বলেন, আমাদের এখানে প্রতি বছর আগুন লাগে। তখন আমাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই আমাদের এই ধরনের প্রশিক্ষন অনেক প্রয়োজন। অথচ হোসিয়ারী সমিতির কমিউনিটি সেন্টারে যে এর উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা আমরা জানিনা। তার নেতা আর বড় বড় মালিকদের নিয়া এগুলো করলে তো হবেনা। সবাইকে শেখাতে হবে। নইলে এর তো উপকার আমরা পাবোনা। খামখা টাকা নষ্ট।
হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের ট্রেনিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিতাইগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আসলে তারা কোথায় কিভাবে ফায়ার সেইফটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ করেছে তা আমার জানা নেই। তবে এই কর্মশালাগুলো প্রশিক্ষিত লোক দিয়ে করাতে হয়। তাই তাদেরকে আমি আমন্ত্রণ জানালাম আমাদের এখানে এসে ট্রেনিং করার জন্য। অথবা আমাদেরকে তাদের কাছে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যও আমন্ত্রণ করছি। তাদের এই ট্রেনিংএর জন্য আমাদের কোনো টাকা অথবা সম্মনীও দিতে হবেনা। আমরা এটা বিনা খরচে করে দিবো।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল বলেন, আমাদের এই কর্মশালায় ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তারা ছিলনা। তবে এটি এফবিসিসিআই এর অর্থায়নে ও সার্বিক সযযোগীতায় হয়েছে। মূলত এসব কর্মশালার আয়োজন করতে যতটুকু জায়গার প্রয়োজন হয়, নয়ামাটি এলাকায় তেমন জায়গা নেই। সেই কারণে আমরা হোসিয়ারী সমিতির সেন্টারে এই কর্মশালার আয়োজন করেছি। প্রথম কর্মশালাটি আমরা মালিকদের নিয়ে করেছি। এরপর আমরা হোসিয়ারী শ্রমিকদের নিয়ে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা করবো।
উল্লেখ্য যে, নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী পল্লীগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা এবং অগ্নিঝুঁকি নিয়ে শঙ্কা ছিল বহু আগে থেকে। সর্বশেষ ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী পল্লীগুলোর ঝুঁকির বিষয়টি আরো সামনে চলে আসে। বিশেষ করে নয়ামাটি ও শহরের দেওভোগ মার্কেটের অগ্নি নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সংবাদও প্রকাশিত হয়। হোসিয়ার এসেসিয়েশনের নেতা ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরের হোসিয়ারী পল্লীগুলো আংশিক কাশীপুর অথবা বন্দরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
আপনার মতামত লিখুন :