News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯

নারায়ণগঞ্জে চিনির বাজার চড়া


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | বিশেষ প্রতিনিধি : প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩, ১০:৪৭ পিএম নারায়ণগঞ্জে চিনির বাজার চড়া

এবার শবে-বরাতের আগে থেকেই চিনির বাজার উথাল পাতাল। পবিত্র শবে-বরাতের আগের দিন পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতন আদায় করে ছেড়েছে চিনির দাম। লাল চিনি নামে কোন চিনির অস্তিত্ব এখন আর চোখে পড়ে না। তাই সাদা চিনিই বিকোচ্ছে। কোন দোকানদার বিক্রি করছে একশ দশ টাকা কেজি। কেউ বিক্রি করছে একশত পনেরো টাকা। আবার কোন ব্যবসায়ী বিক্রি করেছেন একশত পনেরো টাকায়। পরিচিত কাস্টমারের কাছে বিক্রি করেছেন একশত বারো টাকায়। একবাজারে তিন ধরনের দাম আদায় করা হচ্ছে।

নিতাইগঞ্জ ও কালিরবাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলেন, ভাই আমাদের কিছুই করার নাই। শুনছি সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছাড় দিলেও আমরা পাইকারী বাজারের ব্যবসায়ীরা এখনো এই সুবিধা পাই না। সরকার এই সুবিধা দিয়েছেন ৩০ মে পর্যন্ত। অথচ পাইকারী বাজারে চিনির দাম কমার কোন লক্ষণ নেই। বরং প্রতিদিনি হুহু করে দাম বাড়ছে।

নিতাইগঞ্জ ও দ্বিগুবাবুর বাজারের ডিও ব্যবসায়ীরা বললেন, সরকার ছাড় দিয়েছে ঠিকই। তবে সময়মত ছাড় দেয়নি। চিনিতো বিদেশ থেকে এলসি করে আনতে হয়। আজ এলসি করলে চিনি আসবে দুই বা আড়াই মাসের মাথায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি শুল্কছাড়ের ঘোষণা দিল সরকার। এলসি হয়েছে মার্চ মাসে। চিনি আসবে দুই বা আড়াই মাস পর। ঈদের পর চিনি আসবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা কিভাবে জনগণকে মূল্য ছাড় দিবে। মে মাসের পরে গিয়ে চিনির দাম কমতে পারে। রোজায় চিনি আসবে না। সরকার জানুয়ারির শুরুতে ছাড় দিলে এতদিনে চিনি আমদানি সম্পন্ন হতো। মানুষও কমদামে চিনি পেত। সরকার ছাড় দিল ঠিকই। অসময়ে ছাড় দিল। এতে লাভবান হবে আমদানিকারকরা। রমজানের তিন মাস আগে শুল্কছাড় দিলে জনগণ সেই সুবিধা অর্থাৎ কমদামে পণ্য কিনতে পারবে। সরকার অসময়ে দিলে পাবে না। চিনিতো আর দেশে থাকে না, যে আজকে অর্ডার দিলে কালকে চলে আসবে। এলসি’র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চিনি আসতে আড়াই মাস সময় লেগে যায়। সাধারণ মানুষ কি রমজানের দুই মাস পর চিনি কমদামে কিনে খুশি হবে। মোটেও হবে না।                  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিনির দাম গত ছয় মাসে মোট চারবার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কোনোবারই সরকারের বেধে দেওয়া দাম কার্যকর হয়নি। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চিনি কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। নানা অজুহাতে কাটেনি চিনির বাজারে অস্থিরতা। আসন্ন রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি, উল্টো দাম বেড়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, শুল্ক ছাড়ের ফলে খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ পাইকারী বাজারে চিনির দাম কমানো না হলে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়বে না।

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, শুল্ক কমানোর পূর্বে যে চিনি আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো এখনও বিক্রি শেষ হয়নি। শুল্ক ছাড়ের পর এলসি খুলে চিনি আমদানি করলে সেগুলো বাজারে আসতে দুই মাস সময় লাগতে পারে।

এদিকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে তিন হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমদানিকারকরা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত শুল্ক ছাড়ের এই সুবিধা পাবেন।

নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, ‘আমরা চিনির শুল্ক কমানোর জন্য দু-তিন মাস আগেই বলেছিলাম। কিন্তু সরকার তখন উদ্যোগ নেয়নি। তখন শুল্ক কমানো হলে ভোক্তারা রমজানে সেই সুফল পেতেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি বাজারে দাম বেশি। পাইকারীতে না কমলে খুচরা বাজারে দাম কমার কোনো সুযোগ নেই।

নারায়ণগঞ্জের বৃহৎ পাইকারী বাজার নিতাইগঞ্জে গত বুধবার এক বস্তা চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৩৫২ টাকায়। মণপ্রতি চিনির ডিও বিক্রি হয়েছে ৫৩২৫ থেকে ৫৩৩০ টাকায়। সেই হিসেবে কেজি প্রতি চিনি ১০৭ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা এক সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি ১০৬ টাকায় বিক্রি হয়।

নগরীর নিতাইগঞ্জ এলাকার পাইকারী দোকান বিশাখা ট্রেডার্স এর ম্যানেজার জানান, গত ১৫ দিন পর্যন্ত কেজিপ্রতি চিনি ১০৯ টাকা দরে বিক্রি হয়। এর আগে ১০৭ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

নিতাইগঞ্জ, দ্বিগুবাবুর বাজার সহ নগরীর বেশকিছু বাজারে খুচরা দোকানে কেজিপ্রতি চিনি ১১২ টাকা থেকে ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে নগরীর অলিগলির দোকনে ১১৫-১২০ টাকা পর্যন্ত চিনি বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই চিনিবাহী জাহাজ এসেছে পাঁচটি, যেখানে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আছে ২ লাখ ৪১ হাজার টন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য, এ বছর জানুয়ারিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন বেশি চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে।

Islams Group
Islam's Group