বালু নদীর রূপগঞ্জ অংশে দূষণকারী ৬৫টি স্থান চিহ্নিত করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এর মধ্যে দুইটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে তালিকায়। ইটিপি থাকা সত্ত্বেও পাইপের মাধ্যমে সরাসরি তরল বর্জ্য ফেলার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন খোদ জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট। আর তাই সবধরনের প্রমাণাদি নিয়েই প্রতিষ্ঠান দুটির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন নদী রক্ষা কমিশনের কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে কমিশনের কর্মকর্তারা এই তালিকা প্রণয়ন করেছেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, বাসা বাড়ি, মালিক, বর্জ্যের ধরণ, স্থান, অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত নির্ণয় করেছেন তারা। এছাড়া কোন মাধ্যম ব্যবহার করে বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে তাও স্পষ্ট করেছেন সেই তালিকায়। অধিকাংশ বর্জ্যেই বিভিন্ন বাসা বাড়ি, পয়ঃবর্জ্য, ময়লা আবর্জনা, নালা থেকে পতিত হতে দেখা গেছে। তবে বৃহৎ দুটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ সচেতন এবং তাদের ইটিপি থাকা সত্ত্বে¡ও তারা কারখানা পরিচালনা আইন অমান্য করে বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলছেন। যা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কমিশনের কাছে।
নদী রক্ষা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বসতবাড়ির বর্জ্য প্রশাসন থেকে নিয়মিত তদারকি করলেই এগুলো রোধ করা সম্ভব। এছাড়া স্থানীয়ভাবে সচেতনতা তৈরি অনেক বেশি কাজে দেয়। মানুষ বর্জ্য সরানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে মানুষ আর বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলবে না। এক্ষেত্রে সচেতনতা ও তদারকি জরুরী। কিন্তু কারখানাগুলো তো সচেতন। তারা সচেতন হলেও ইচ্ছে করে বর্জ্য নদীতে ফেলছে। এমনও হয়েছে কারখানায় প্রবেশ করার পরপরেই ইটিপি চালু করেছে। অর্থাৎ এর আগে তারা ইটিপি চালু না করেই বর্জ্য নদীতে ফেল ছিল।
নদী রক্ষা কমিশনের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ভোলানাথপুর এলাকায় এনডিই কোম্পানি লিমিডেট দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি নদীর বাম তীর হতে রিং পাইপের মাধ্যমে তরল কেমিক্যাল বর্জ্য সরাসরি বালু নদীতে ফেলে নদী দূষণ করছেন।
একইভাবে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বালু দক্ষিণপাড় এলাকায় ইস্টার্ন স্ট্রু পেপার মিল দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই পেপার মিলটি নদীর বাম তীর থেকে ড্রেনের মাধ্যমে তরল কেমিক্যাল বর্জ্য সরাসরি বালু নদীতে ফেলে নদী দূষণ করছেন।
নদী রক্ষা কমিশনের কর্মকর্তা সঞ্চয় বলেন, সম্প্রতি আমাদের নদী রক্ষা কমিশনের এক অভিযানে আমরা দেখেছি এই দুটি প্রতিষ্ঠান এখনও নদী দূষণ করে চলছে। এই বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি। তারা দ্রুত এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিবে সেটা আমাদের প্রত্যাশা।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী এই বিষয়ে বলেছিলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান নদী দূষণ করছে তাদের তালিকা আমরা উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনকে হস্তান্তর করেছি। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিজেও এটি দেখেছেন। এরপরে তাদের দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। একই সাথে সামাজিকভাবে নদী দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠা উচিত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যদি এই বিষয়গুলো দেখভাল করে তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো নদী দূষণ অব্যাহত রাখার সাহস পায় না।
আপনার মতামত লিখুন :